গুছিয়ে দুধ দিয়ে এলাচ দিয়ে চা-টা নিয়ে সবে খেতে বসেছে মানসী, ঠিক তখনই বেলটা বেজে উঠল। মুহূর্তে মুডটা অফ হয়ে গেছিল মানসীর। কোথায় ভেবেছিল চা খেতে খেতে বাসবীর সঙ্গে একটু খোশগল্প করবে, কিন্তু সে গুড়ে বালি। সে জানে এখন কে তার দোরগোড়ায় আসতে পারে। তার ওপরে থাকে মণিকা। মানসীর তার সঙ্গে কথা বলতে তেমন ভালো লাগে না। মানে মনের আরাম হয় না আর কি। কেবল কতগুলো আষাঢ়ে গল্প জুটিয়ে আনবে আর খানিক সময় কাটানোর ধান্দা। তবু পড়শি তো! সৌজন্যবশত দরজা খুলতেই হল মুখে একগাল হাসি নিয়ে।
“কী গো, সকাল থেকে কত মেসেজ পাঠালাম হোয়াটসঅ্যাপে, একটাও দেখার সময় পেলে না?”
“না গো, একটু ব্যস্ত ছিলাম।”
“কীসের এত ব্যস্ততা গো! সবসময়ই তো অনলাইন দেখি।”
“আরে, সকাল থেকে ওয়াই-ফাইটা অন করে রাখি, তাই সবসময় অনলাইন দেখায়।”
“দাদাও তো নেই এখন। তাই ভাবলাম তোমার কাজের মাসিরা তো সবই সকালে এসে কাজ সেরে দিয়ে যায়। তাই এখন নিশ্চয়ই তোমার হাতে সময় হবে, দুটো কথা বলে আসি। সারাদিন আর কত টিভি দেখব আর ঘরের কাজ করব বলো তো?”
“ভালো করেছ। চা খাবে?”
“না না, তোমাকে আর করতে হবে না।”
এইরকম দু-চারটে স্বাভাবিক কথাবার্তার পরই মানসী আর কথা খুঁজে পায় না কী বলবে। তবে মেয়েটা উপকারী আর মনটাও ভালো। তেমন লেখাপড়া জানে না। বাইরের দুনিয়া সম্বন্ধে একেবারেই অজ্ঞ। শোনা যায় মণিকার মা মণিকার বর অর্থাৎ শেখরদের বাড়িতে রান্নার কাজ করতে আসত। সেখান থেকেই ওর ওই বাড়িতে যাতায়াত এবং বেশ মাখোমাখো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়।
“বসো না। চা খাবে না যখন তখন দুটো মিষ্টি খাও।”
“না দিদি। দেখো না আমার কীরকম ভুঁড়ি হয়েছে। মিষ্টি খাওয়া একদম ছেড়ে দিয়েছি।”
“কী করে আছো গো! আমি তো কোনোমতেই থাকতে পারব না।”
“তোমার দরকারও নেই। এত সুন্দর ফিগার তোমার!”
“কী আর করি বলো ফিগার মেন্টেনের জন্য।”
“তোমার কিছু করার দরকারই পড়ে না। তোমায় যা দেখতে সুন্দর না, যে দেখবে সে তাকিয়েই থাকবে। আর এদিকে গতকাল কী হয়েছে শুনেছ?”
একটু আগ্রহ দেখায় মানসী। তাছাড়া নিজের রূপের প্রশংসা শুনলে কোন মেয়েরই-বা মন গলে না এই জগতে! তাই চাইলেও বাজে ব্যবহার করতে পারে না।
“আমাদের উলটোদিকের ফ্ল্যাটটা আছে না গো...”
“হ্যাঁ, ওই বিষ্ণুপ্রিয়া অ্যাপার্টমেন্টস।”
“হ্যাঁ গো। তুমি তো পারতপক্ষে ছাদে ওঠো না, আর আমি তো থেকে থেকেই ছাদে উঠি। দেখি কী, ওই যে ওদের চারতলায় হাসব্যান্ড-ওয়াইফ থাকে না? ভীষণ সাজে গো বৌটা। পুজোর সময় অষ্টমীর দিন লেহেঙ্গা পরেছিল।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি।”
“ওরা ওই ওপরে থাকে। গতকাল দেখি বিকেলের দিকে ওরা মানে বর-বৌ হাঁটছিল ছাদে। তারপর দেখি বালিশ-বিছানা সব এনে দিল। বুড়ি শাশুড়ি মা, তাকেও নিয়ে এল।”
“সে আবার কী!”
“হ্যাঁ গো! আমিও তোমার মতো হতবাক হয়ে গেছিলাম। বুড়িটাকে রাতের বেলা মনে হয় ছাদে শুতে দেয়। তাই সব আয়োজন করে গেল।”
এমন একটা কথা শুনে সত্যিই ভাবিত হল মানসী। সে নিজেই চাকরি করে মানবাধিকার কমিশনে। বুকের ভেতরটা কীরকম ধড়াস করে উঠল। মনে হচ্ছিল এক্ষুনি গিয়ে খোঁজ নিয়ে আচ্ছা করে দেয়। কিন্তু সত্যিটা না জেনে কিছু করা ঠিক হবে না। এর আগেও মণিকা এরকম নানা মুখরোচক খবর নিয়ে হাজির হয়েছে। সেই খবরের কোনোটারই সত্যতার কিন্তু প্রমাণ দিতে পারেনি। এই তো মাস খানেক আগে ওদের ফ্ল্যাটের একতলায় থাকেন ঋতম বসু, ওঁর আইটি সেক্টরে চাকরি। প্রায়ই ওভারসিজ প্রজেক্ট পড়ে, তাই পরিবার-পরিজনকে ছেড়ে যেতেই হয়। মানসীর নিজের স্বামী, নিজের ভাই যেহেতু এই আইটি সেক্টরেই কর্মরত তাই ভালোভাবে জিনিসটা বোঝে সে। তা উনি দু-বছরের জন্য জার্মানি ট্রান্সফার হয়ে গেছিলেন। তখন অবশ্য ঋতম বসুর স্ত্রী অনন্যার সঙ্গে আলাপ হয়নি মানসীর। সেইসময় যখন চোখ বড়ো বড়ো করে মণিকা এসে বলেছিল, “জানো দিদিভাই, ওই যে একতলায় থাকে না ঋতম বসু, ওর জানো তো, দুটো বিয়ে।”
“কে বলল?” বলে থমকে দাঁড়িয়েছিল মানসী। অফিসে বেরোনোর সময় মণিকার আগমনে একটু বিরক্তই হয়েছিল, কিন্তু এমন একটা খবর শোনাল যে থমকে দাঁড়াতেই হল মানসীকে।
“তুমি এখন অফিস যাচ্ছ, যাও। বিকেলে আসব। সাড়ে ছ’টা নাগাদ। তোমার সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করব।”
“বেশ, তখনই এসো। আমি ফাঁকা থাকব।”
সেদিন একঘণ্টা দুজনে মিলে অনেক গল্প-হাসিঠাট্টা করেছিল। সন্ধেটা মন্দ কাটেনি মানসীর। কিন্তু মণিকার মতো একটা মেয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা আছে, এটা তার ভাবতে কেমন অস্বস্তি হয়। আত্মমর্যাদায় লাগে। যতই হোক, এক রাঁধুনির মেয়ে। তাই সে বিশেষ আমল দিতে চায় না। কিন্তু এমন একেকটা ঘটনা নিয়ে আসে যে প্রথম দফায় আগ্রহ না দেখিয়ে উপায় থাকে না। প্রথমদিন তো মণিকার কথা শুনে মানসী বিশ্বাস করে বসেছিল যে ঋতম বসুর দুটো বিয়ে।
“দেখেছ তো, ইদানীং ঋতম বসুকে দেখতে পাওয়া যায় না।”
“হ্যাঁ, তা হয়তো হবে। অত খেয়াল করিনি গো ভালো করে।”
“হ্যাঁ গো, ওর আরেকটা বিয়ে আছে। সেখানে আর এখানে ভাগাভাগি করে থাকে।”
শুনে একটা মৃদু আলোড়ন অনুভব করেছিল বটে মানসী। কীরকম একটা ভয়ও করছিল। এমন মুখোশধারী মানুষ ঋতম বসু! দেখে তো বোঝার উপায় নেই। যেতে আসতে ওদের ফ্ল্যাটের সামনে দিয়ে অজান্তেই একটা কৌতূহল কাজ করত। দরজা খোলা দেখলেই উঁকিঝুঁকি মারার প্রবণতা চলে আসত মানসীর মধ্যে। কিছুদিন বাদে যখন ঋতম বসুর স্ত্রী অনন্যার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তখন ধীরে ধীরে ভুল ধারণাটা কেটে গেছিল। ভেবেছিল বলবে মণিকাকে এই নিয়ে একদিন। তারপর সিদ্ধান্ত বদলাল। ওর ওই সংকীর্ণ গণ্ডিতে ও আর অন্য কোনো কিছু হয়তো ভাবতেই পারে না। শুধু তাই নয়, তাদের উলটোদিকের আবাসিকে দেখা যায় তিনতলায় এক বয়স্ক মানুষ এবং দুই প্রবীণা থাকেন। সেই নিয়েও মণিকা একদিন বলেছিল, “দেখেছ তো দিদিভাই, ভদ্রলোকের কিন্তু দুটো বিয়ে। কেমন মিলেমিশে বৌদুটো থাকে বলো।”
শুনে সত্যিই আশ্চর্য হয়ে গেছিল মানসী। সেও দেখেছে বার দুয়েক, কিন্তু তার মাথায় এই কথা কখনো আসেনি। পরে তার স্বামী সুদীপকে বলাতে সে ভীষণ রুষ্ট হয়েছিল শুনে।
“কতটুকু জানো তুমি? কতটুকু দুনিয়া দেখেছ শুনি? ওই ভদ্রলোক মানে অসিতাভ স্যানালের স্ত্রী আর অন্যজন হচ্ছেন ওঁর বিধবা বোন, বুঝলে? ননদ অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যাওয়াতে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে জর্জরিত দেখে নিজে দায়িত্ব নিয়ে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন বেণুদিদা অর্থাৎ অসিতাভ স্যানালের স্ত্রী। আজকালকার মেয়েরা ভাবতে পারবে এমন কথা! যত্তসব মেয়েলি কূটকচালি তোমাদের।”
কীরকম হীন প্রতিপন্ন হয়েছিল মানসী সুদীপের সামনে। তারপর থেকে ভেবেছিল মণিকার কথা কিছুতেই সে কানে তুলবে না। কিন্তু সে আসেই এমন সব রোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে। সেদিন এল আরেকরকম চমকদার খবর নিয়ে।
“কই গো দিদিভাই, শুনেছ, আমাদের ফ্ল্যাটের পাশে যে আমগাছটা আছে না গো, সেখানে একটা কাকে বাসা করেছে।”
“বুদ্ধিমানের কাজ করেছে। আম পাকবে আর ঠুকরে ঠুকরে খাবে।”
“আরে সে না হয় হল। কিন্তু আমাদের যে প্রমোটার গো, তার মা তো পাশেই ওদের ভিটে বাড়িটায় থাকে। তা বুড়ির তো অঢেল পয়সা আর সোনাদানা আছে। তা কাকটা নাকি তার সীতাহার মুখে করে নিয়ে গেছে তার বাসা সাজাবে বলে।”
“সবকিছুর একটা লিমিট থাকে মণিকা।”
“তোমাকে ছুঁয়ে বলছি দিদিভাই। তুমি বিশ্বাস না করলে ছাদে উঠে দেখো। আমিও প্রথমে বিশ্বাস করিনি গো। কীসব হইচই দেখে ছুটে গিয়ে ছাদে উঠে ব্যাপার-স্যাপার দেখে তো আমি অবাক।”
সেবার হেসেই ব্যাপারটা উড়িয়ে দিয়েছিল মানসী, কিন্তু চুপিসারে ঠিকই একসময় ছাদে উঠেছিল ব্যাপারটা অনুসন্ধান করবে বলে। কিন্তু সে সোনার সীতাহার তো দূরস্থান, কাকের বাসাটাই খুঁজে বের করতে পারেনি। গাছের ঘন ডালপালা পাতার আড়ালে কোথায় যে বাসাটা! এমনিতেই তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কম। একথা সে সুদীপের মুখেও শুনেছে অজস্রবার। কাক যে একটা বাসা করেছিল সে বিষয়ে ফ্ল্যাটের সবাই একমত ছিল। সীতাহারের গল্পে জল মেশানো থাকতে পারে, কিন্তু সে তো কাকের বাসাই খুঁজে বের করতে পারল না, তাই আর সত্যতা যাচাইয়ের প্রশ্নই ওঠে না।
এমনি সব আজব আজব ঘটনার মোড়কে মণিকা প্রায়ই তার দোরগোড়ায় আসে; এই জবর খবরের পর নিজেদের সাংসারিক গল্পও হয় খানিক। ঘণ্টা-দেড় ঘণ্টা কোথা দিয়ে যে কেটে যায় টের পায় না মানসী।
বাইশে মার্চ থেকে লক-ডাউন আচমকা শুরু হওয়াতে সুদীপও মা-বাবার ওখানে আটকে গেল। গেছিল কল্যাণী, সপ্তাহান্তে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে। মাসে একবার অন্তত শুক্রবার অফিস করে গিয়ে রোববার দুপুরে খেয়েদেয়ে সন্ধে নাগাদ ফেরে সুদীপ। আগে আগে মানসীও সঙ্গী হত। কিন্তু গেলেই কেবল বাচ্চা হচ্ছে না কেন এই নিয়ে কথা উঠত। ভালো লাগত না আর মানসীর এই এক কথা শুনতে। শেষ যে উইক-এন্ডে গেছিল, তখন কল্যাণীর কাজের মাসি বলেছিল তার শাশুড়িকে, “বউমা তোমার বাঁজা নাকি গো!” কথাটা মোটেও আস্তে বলেনি যে মানসীর কানে যাবে না। তার শাশুড়ি-মা তাকে মুখে ইশারা করে চুপ থাকতে বলেছিল। মানসীর আপত্তি ঠিক এখানেই। কাজের মাসি বলেছিল বলে সে যত না কষ্ট পেয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি বুকে বেজেছিল যে তার শাশুড়ি-মা কেন প্রতিবাদ করেননি এই কথার। উনি ইশারা করে চেপে যেতে বলেছিলেন। অর্থাৎ মানসীর আড়ালে হয়তো উনিও এমন কথা বলে থাকেন। সেবার থেকেই মানসী ঠিক করেছিল আর কোনো ডাক্তারও দেখাবে না আর কল্যাণীর বাড়িতেও পা দেবে না। তাকে সুদীপ অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে অটল।
জনতা কারফিউর প্রথম ক’টা দিন মন্দ কাটেনি। বাড়িতে তো থাকা হয় না। ঘরদোর দারুণ উদ্যমে সে ঝাড়পোঁছ করল। সাজাল-গোছাল সুনিপুণভাবে। কত রান্না কতদিন খায়নি—নিজের হাতে রান্না করেনি বলে আক্ষেপ ছিল, সেইসব শখ সে পূরণ করল মনের সুখে। কিন্তু একা থাকার বিষাদ ধীরে ধীরে গ্রাস করছিল তাকে। কত আর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গল্প করবে? তাছাড়া এখন যেহেতু কাউকে ঢুকতে দেওয়া বারণ, সেই হিসেবে বাড়ির সব কাজ—রান্না করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, মায় ঝাঁট দেওয়া, পোঁছা সবই করতে হচ্ছে নিজদের। তাই হাতে কারুর কিন্তু অঢেল সময়ও থাকছে না। সারাক্ষণ এইসব অপছন্দের কাজ করতেই বা কতদিন কার ভালো লাগে! কত আর গান শুনবে, গল্পের বই পড়বে, টিভি দেখবে আর হালফ্যাশানের ব্লগে চোখ রাখবে? সুদীপের সঙ্গেও মেপে কথা বলতে হচ্ছে, কারণ সুদীপ সদাসর্বদা বাবা-মায়ের সাহচর্যে। কারুর ঘরে গিয়ে যে গল্প করবে তার উপায় নেই, কারণ এই করোনা আতঙ্কে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-এর ঠ্যালায় সবাই গৃহবন্দি করে রেখেছে নিজেদের, আর সে এমনিতেও খানিক আসামাজিক। কারুর সঙ্গে গিয়ে যে অন্যসময় খুব আড্ডা মারে, সময় কাটায়, এমন নয়। তাই আচমকা এখন যেতে কেমন কুণ্ঠাবোধ হয়। অন্য সময় সে সকাল আটটা নাগাদ নাকে মুখে কিছু গুঁজে চলে যেত অফিসে। ফিরতে ফিরতে রাত সাতটা সাড়ে সাতটা বেজেই যেত। তখন আর সামাজিকতা রক্ষা করার তেমন প্রয়োজন পড়ত না। কিন্তু এখন! ওই খেপিটাই আসে, তাই হয়তো ওর কাছে যেতে মনে কোনো দ্বিধা নেই মানসীর। কিন্তু তারও এখন বর আছে চব্বিশটি ঘণ্টা। তাই মণিকারও আপাতত পাত্তা নেই। তবু ওকেই একবার হেঁকে দেখা যায়।
রোদ মরে এলে বিকেলে ছাদে খুব সুন্দর ফুরফুরে হাওয়া দেয়। গরমটাও তেমনি পড়েছে এই করোনা কালে। গা ধুয়ে ছাদে উঠল মানসী। আগে তো মণিকা রোজ এই সময় ছাদে উঠে সবার সঙ্গে কথা বলত, হাঁকাহাঁকি করত, তার বেশ ভালোই কানে যেত। কিন্তু ইদানীং আর পাত্তা নেই তো!
মিনিট কুড়ি পায়চারি করল সে। কিন্তু মানুষের সঙ্গে দুটো কথা বলার জন্য মনটা বড়ো আকুলিবিকুলি করছিল মানসীর। একটু সান্নিধ্য, একটু সাহচর্য। অতঃপর আর থাকতে না পেরে সে গিয়ে মণিকার দরজায় বেল টিপল। বেল বাজতে তার বর খুলে দিল। পরনে বারমুডা আর কাঁধে গামছা।
“কে গো?” বলে মণিকা এগিয়ে এসেছে ইতিমধ্যে। রান্নাঘর থেকে তখন গরম পেঁয়াজি ভাজার গন্ধ আসছে। মানসী বুঝল, একটুকরো সুখী দাম্পত্যের মাঝে সে ঢুকে পড়েছে। তবু মণিকা বলল, “কী গো, কী খবর? কিছু বলবে?”
সে যে এই মুহূর্তে একেবারে অনাহূত তা টের পাচ্ছিল। মানসীর একটু অপ্রস্তুত লাগছিল নিজেকে। তবু জোর করে মুখে হাসি টেনে বলল, “আসলে তুমি যে বয়স্ক মহিলাটার কথা বলছিলে না, তাঁকে আমিও ছাদে দেখলাম বালিশ-চাদর নিয়ে দিয়ে গেল।”
একরাশ বিস্ময় নিয়ে বিস্ফারিত নেত্রে মণিকা বলে উঠল, “সে কী গো! সত্যি তাই!”
___
অলঙ্করণঃ- সায়ন্ন্যা দাশদত্ত
No comments:
Post a Comment