প্রবন্ধঃ আলো দিয়ে আঁকাঃ সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়

আলো দিয়ে আঁকা


সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়



আজ থেকে বছর পনেরো আগেও ছবি তোলাটা একটা বড়োসড়ো ব্যাপার ছিল। সঙ্গে ক্যামেরা থাকতে হবে, ফিল্ম কিনে তাতে ভরতে হবে, সেটা ফুরিয়ে গেলে চলবে না, ছবি তোলার মতন যথেষ্ট আলো থাকতে হবে, তারপর ফিল্ম ফুরোলে সেটা ডেভেলপ আর প্রিন্ট করতে হবে, অ্যালবামে ভরতে হবে ইত্যাদি। আজকাল আমাদের সবার হাতে হাতে সারাক্ষণ ক্যামেরা, ফিল্মের বালাই নেই, প্রায় অন্ধকারেই ছবি ওঠে। প্রিন্টও করা হয় না বললেই চলে। তাই ছবি তোলা বেড়ে গেছে লক্ষগুণ। অথচ ফটোগ্রাফির মূল যে নিয়মগুলো, সেগুলো কিন্তু ফিল্মের যুগে যা ছিল, এখনও তাই আছে। এই নিয়মগুলো একটু মাথায় রাখতে পারলেই আমাদের ছুটিছাটায় বেড়াতে গিয়ে বা বাড়িতে আনন্দের মুহূর্তে তোলা ছবিগুলো অনেক ভাল হবে। আজ আমি এরকমই কয়েকটা সহজ নিয়ম নিয়ে লিখতে চাই।

অবশ্য প্রথমেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে আমি ফটোগ্রাফির কী জানি এবং আমি কেন ফটোগ্রাফি শেখাচ্ছি। আমি কোনও ফটোগ্রাফির কোর্স করিনি। বই পড়ে এবং ইনটারনেটের মাধ্যমে ফটোগ্রাফি শিখেছি, আর শিখেছি আমার বাবার কাছে। বাবাও বই পড়েই শিখেছিল। বাবা এখন আর মোবাইলে ছাড়া ছবি তোলে না, কিন্তু এক সময়ে ফিল্ম এস এল আর ক্যামেরায় প্রচুর ছবি তুলেছে। এখন সে ক্যামেরাটা আমি ব্যবহার করি, আর তার সঙ্গে মূলত ডিজিটাল এস এল আর ক্যামেরাতেই ছবি তুলি। আমার ছবি তোলা অবশ্য শখের ছবি তোলা। বেড়াতে ভালবাসি, সেই সঙ্গে নানারকম ছবি তুলতেও। আমি এখানে যা যা লিখব, তার প্রথম অংশটা একটু ভাল ক্যামেরা থাকলে তবেই প্রযোজ্য, ফোনের ক্যামেরায় সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। দ্বিতীয় অংশের কথাগুলো সব রকম ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তাই সবারই কাজে লাগবে।


১ - আলো


ক্যামেরায় ছবি ওঠে আলো দিয়ে। খুব সহজ করে বললে, একটা জিনিসের গা থেকে আলো এসে ক্যামেরায় ঢোকে, আর পিছনের সেন্সর বা ফিল্মে সেই আলোটা ধরা পড়ে জিনিসটার ছবি হয়ে। এই আলোর পরিমাণ কম-বেশি করে ছবিতে তারতম্য আনা যায়। আলো বাড়ানো বা কমানোর তিনটে উপায় (আমি স্টুডিওয় আলো বা অন্ধকার তৈরি করাকে এই আলোচনার বাইরে রাখছি)। এক, সামনের ফুটোটা কতক্ষণ খোলা থাকবে, সে সময়টা (shutter speed) বাড়ানো-কমানো। দুই, ফুটোটার মাপ (aperture) বাড়ানো-কমানো। তিন, সেন্সরটা আলোর প্রতি কতটা সংবেদনশীল হবে (ISO) সেটা বাড়ানো-কমানো। এবার দেখা যাক এগুলোর ফল কী হয় ছবির ওপর।

শাটার স্পিড কমিয়ে দিলে, শাটার (মানে ফুটোর ঢাকনাটা) বেশিক্ষণ খোলা থাকবে। ফল, বেশি আলো। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যতক্ষণ ফুটোটা খোলা, ততক্ষন আলো এসে ছবি আঁকছে। এর মধ্যে যদি আলোর উৎস বা ক্যামেরা নড়ে যায় তাহলেই ছবি ঝাপসা হয়ে যাবে। একে বলে মোশন ব্লার (motion blur)। তাই কম আলোয় স্থির জিনিসের ছবি তুলতে গেলে ক্যামেরাটা ট্রাইপড বা অন্য কিছুর ওপর রাখা দরকার, নাহলে হাতের কাঁপুনিতে ছবি নষ্ট হয়ে যাবে। তবে ছবির বিষয়বস্তু যদি নড়ে তাহলে অবশ্য ট্রাইপড দিয়ে কিছুই হবেনা। সেক্ষেত্রে হয় মোশন ব্লার ব্যবহার করে ছবির মধ্যে গতি বোঝাতে হবে, আর নাহলে অ্যাপার্চার বা আই এস ও পালটে কাজ সারতে হবে। শাটার স্পিড মাপা হয় সেকেন্ডে। সাধারণত সেকেন্ডের ভগ্নাংশে লেখা হয়, তাই ১/১০০ হল ১/৫০ এর অর্ধেক সময়, আর ১/২০০ এর দ্বিগুণ সময়।

এখানে ছবির মধ্যে গতি আনার কয়েকটা উদাহরণ দিই। প্রথম ছবিটা রাতে তোলা, তাই শাটার স্পিড কমিয়ে রাখতে হয়েছিল। আমি ইচ্ছে করেই নাগরদোলাটাকে ফ্রেমে রাখি, যাতে তার ঘোরার গতিটা ছবিতে ধরা পড়ে। দ্বিতীয় ছবিটা প্যারিসের ল্যুভ্র মিউজিয়ামে তোলা। এখানে শাটার স্পীড ইচ্ছে করে কম রেখেছিলাম যাতে লোকজন ঝাপসা হয়ে যায়। মূর্তি তো আর নড়াচড়া করবে না, আর ক্যামেরাটাও একটা রেলিঙের ওপর রেখে দিয়েছিলাম। তিন নম্বর ছবিটা মজার। এক্ষেত্রে ছবির বিষয়বস্তু, অর্থাৎ দোলনাটা নড়ছিল। আমি চাইলে খুব বেশি শাটার স্পিড ব্যবহার করে গোটা ব্যাপারটার একটা স্থির ছবি তুলতে পারতাম, কিন্তু তা না করে আমি শাটার স্পিড কমিয়ে ছবি তোলার সময় ক্যামেরা দিয়ে দোলনাটাকে ফলো করি, অর্থাৎ দোলনার সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরাটাকেও একই ভাবে নাড়াই। এর ফলে দোলনার আর ক্যামেরার আপেক্ষিক গতিবেগ শূন্য হয়ে গিয়ে দোলনার ছবিটা পরিষ্কার উঠেছে, কিন্তু পিছনের অন্যান্য জিনিস নড়ে গেছে। এতে ছবির মধ্যে একটা গতির সঞ্চার হয়েছে। এই কায়দাটাকে বলে প্যানিং, এটা খেলাধুলোর ছবিতে খুব দেখা যায়।



                                                       


                                                      




এবার আসি অ্যাপার্চারের প্রসঙ্গে। ক্যামেরার সামনের ফুটোটাকে অ্যাপার্চার বলে, আর সেটাকে ছোট-বড় করেও আলো কম-বেশি করা যায়। এটা মাপা হয় একটা সংখ্যা (f -number) দিয়ে। যত বড় সংখ্যা তত ছোট ফুটো। তার মানে f/৫.৬ এ  f/১১ এর থেকে বেশি আলো ঢুকবে। তবে এখানে একটা সমস্যা আছে। অ্যাপার্চার খোলার সঙ্গে সঙ্গে যে দূরত্বের জিনিস ফোকাস করা হয়েছে, তার সামনে-পিছনের জিনিস ঝাপসা হতে থাকে। পোর্ট্রেট জাতীয় ছবিতে এটা হলে সুবিধে - সামনে পিছন যত ঝাপসা হবে তত ফোকাস করা বিষয়বস্তুর দিকে নজর পড়বে। তবে পারিপার্শ্বিক “কনটেক্সট” এর ছবি যদি স্পষ্ট তুলতে হয়, যেটা বেড়াতে গিয়ে অনেক সময়েই আমরা করতে চাই, সেক্ষেত্রে অ্যাপার্চার ছোট রাখাই ভাল। অবশ্য একই অ্যাপার্চার রেখে মডেলের কাছে এগিয়ে গেলেও ব্যাকগ্রাউন্ড ঝাপসা হয়ে যাবে। ফটো তোলার সময়ে সব কিছু মাথায় রেখেই তুলতে হবে। নিচে অ্যাপার্চার কম-বেশি দুটো ছবির উদাহরণ দেওয়া হল।



                                                   



শেষে বলি আই এস ওর কথা। আই এস ও (ISO) হল কত কম আলোয় ফটো তোলা যাবে তার একটা মাপ। ফিল্মের যুগে একবার ক্যামেরায় ফিল্ম ভরলে আর আই এস ও পালটানোর সুযোগ থাকত না। ডিজিটাল ক্যামেরায় সাধারণত আই এস ও ৫০ কী ১০০ থেকে শুরু হয়ে আজকাল খুব ভাল ক্যামেরায় ৩২০০০ পর্যন্তও যায়। যত বড় সংখ্যা তত কম আলোয় ছবি উঠবে, কিন্তু বড় সংখ্যা মানে ছবিতে “নয়েস”-ও বেশি আসে, তাই যত খুশি আই এস ও বাড়ানোটা কাজের কথা নয়। তবে অনেক সময়ে নয়েস-ওলা ছবি থাকা ছবি না থাকার থেকে ভাল। নিচে সেরকম একটা উদাহরণ দিলাম। আকাশগঙ্গা ছায়াপথের এই ছবিটা ২০১৫ সালে আমেরিকার আর্চেস ন্যাশনাল পার্ক থেকে তোলা। সেই রাতেই  প্রথম আমি এইভাবে আকাশগঙ্গা দেখি। অভিজ্ঞতার অভাবে আর উত্তেজনার বশে একটু বেশি আই এস ও দিয়ে তুলে ফেলেছিলাম ছবিগুলো। আমার এখনকার ক্যামেরাটায় অবশ্য আরও বেশি আই এস ও তেও নয়েস আরও কম আসে।




এতখানি পড়ে মনে হতে পারে, এত কথা কী করে মাথায় রাখব? ভাল কিছু দেখলে ছবি তুলব, না অঙ্ক কষব? সৌভাগ্যবশত, আজকাল অঙ্ক কষার কাজটা ক্যামেরাই করে দেয়। তাই আলো কম চাই না বেশি চাই জানিয়ে ছবি তুললেই সাধারণত ভাল ছবিই ওঠে। তাও, এ ব্যাপারগুলো জেনে রাখা ভাল। কখনও হয়ত খুব হাওয়ায় হাত নড়ে যাচ্ছে, বা ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু আজেবাজে জিনিস এসে পড়ছে, তখন চট করে অ্যাপার্চার বা শাটার স্পিড অ্যাডজাস্ট করে নিলেই ভাল ছবি উঠবে। আমি বড় ডি এস এল আরে ছবি তোলার সময়েও সব ব্যাপারগুলো প্রতিবার পালটাই না। অ্যাপার্চার বা শাটার স্পিড, যে কোনও একটা সেট করে দিই, ক্যামেরা অন্যগুলো অ্যাডজাস্ট করে দেয়। দিব্যি ছবি ওঠে।


২ - আঁকা


এতক্ষণ যা যা বললাম, সেগুলো ক্যামেরায় ম্যানুয়াল বা সেমি-ম্যানুয়াল সেটিং থাকলে তবেই কাজে লাগে। আজকাল অবিশ্যি কিছু মোবাইলেও বেশ অনেকরকম সেটিংওলা ক্যামেরা থাকছে, কিন্তু তাও বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ছবি তোলা মানে শুধু মোবাইল তাক করে শাটার টিপে দেওয়া। ওপরে লেখা দুয়েকটা ব্যাপার, যেমন অল্প আলোয় স্ট্যান্ড ব্যবহার করার পরামর্শটা, মোবাইলের ক্ষেত্রেও খাটে বটে, তবে বাকিটা প্রযোজ্য নয় মোটেই। তাই এই পরের অংশে দেখে নেওয়া যাক মোবাইল বা অন্য যে কোনও ক্যামেরায় ভাল ফটোগ্রাফি করার কিছু নিয়ম। 

প্রথম নিয়ম - ক্যামেরাটা সোজা রাখতে হবে, মানে মাটির সমান্তরাল। ছবিতে দিগন্তরেখা দেখা গেলে এই নিয়মটা আরও বেশি করে মানতে হবে। দ্বিতীয় নিয়ম - ছবির প্রধান বিষয়বস্তু, মানে ধরুন আপনার মডেল, মাঝখানে থাকবেনা, থাকবে একটু পাশে। ছবির ডান বা বাম প্রান্ত থেকে এক-তৃতীয়াংশ দূরে থাকলে সবথেকে ভাল হয়। ঠিক সেরকমই, দিগন্তরেখা ছবির মাঝবরাবর না রেখে ওপর থেকে বা নিচ থেকে এক তৃতীয়াংশ দূরে রাখলে ভাল হয়। একে বলে রুল অফ থার্ডস। এই নিয়মটা চিত্রশিল্পীরা ছবি আঁকার সময়ও ব্যবহার করে থাকেন।




ফটোগ্রাফি অনেকটা ছবি আঁকার মতনই। ছবির মধ্যে কী কী থাকছে, আর কী কী বাদ যাচ্ছে সেটা ছবি তোলার আগে দেখে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের মাঝে ডাস্টবিন কিংবা দৃষ্টিকটু সাইনবোর্ড বা ইলেক্ট্রিকের তার ইত্যাদি অনেক সময় একটু চেষ্টা করলেই এড়ানো যায়, কিন্তু ছবি তোলার সময়ে আমরা খেয়াল করি না ফ্রেমের মধ্যে এসব আছে। অনেক সময়ে দেখা যায়, আপনি কারো ছবি তুলেছেন, কিন্তু তাঁর মাথার ওপর দিয়ে যে শিঙের মতন একটা গাছের ডালপালা দেখা যাচ্ছে সেটা খেয়াল করেননি। এসব বিষয়ে একটু সাবধান থাকতে হবে। আবার এর উলটোটাও সত্যি, অর্থাৎ একটা কিছুর পিছন দিয়ে আরেকটা কিছু দেখা গেলে সেটা ভাল ছবিও বানিয়ে দিতে পারে, যেমন এই নিচের ছবিটায় হয়েছে।




ছবি তোলার পক্ষে সবথেকে ভাল সময় হল সূর্য ওঠার পর এক-দেড় ঘন্টা, আর সূর্য ডোবার আগে এক-দেড় ঘন্টা। এই সময়ে আলোটা বেশ সোনালী রংয়ের হয় বলে এই সময়টাকে বলে গোল্ডেন আওয়ার (golden hour)। শুধু আলোর রংই যে ভাল হয় তা নয়, সূর্যটা নিচু থাকে বলে আলোটা আসেও পাশের দিক থেকে তির্যক ভাবে, যার ফলে ছবির মধ্যে বেশ একটা আলোছায়ার খেলা তৈরি করা যায়। ঠিক কীভাবে কোনদিক থেকে ছবি তুললে যে সবথেকে ভালো উঠবে সেটা অবশ্য তুলতে তুলতে বোঝা যায়। দুপুরবেলায়, সূর্য যখন মধ্যগগনে, সেই সময়টা ছবি তোলার পক্ষে সবথেকে খারাপ। রোদের তেজ এত বেশি থাকে যে ছবির উজ্জ্বল জায়গা সাদা হয়ে যায়, এবং অনেক সময়ে সেটাকে ঠিক করতে গিয়ে ছায়ার জায়গাগুলো কালো হয়ে যায়। তাছাড়া ওপর থেকে সোজাসুজি আলো আসার ফলে ছায়া জিনিসটাকে সেভাবে ব্যবহার করা যায় না। কোথাও বেড়াতে গেলে সবসময়ে দুপুর এড়িয়ে ছবি তোলা যায় না, তবে এ ব্যাপারটা জানা থাকলে হয়ত সকাল-সন্ধ্যায় বেশি বেড়ানোর প্ল্যান করা যায়। নিচের ছবিদুটো আমেরিকার গ্রেট স্যান্ড ডিউন্স ন্যাশনাল পার্কে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তোলা। প্রথমটা তোলা দুপুরবেলায়, দ্বিতীয়টা সূর্যাস্তের এক ঘন্টা আগে।




  


   


শেষে বলি, ছবি তোলার জন্য সবসময়ে তৈরি থাকতে হবে। চটপটে না হলে রাস্তাঘাটে শ্রেষ্ঠ ছবিগুলো মিস হয়ে যায়। এ ব্যাপারটা ডিজিটাল ক্যামেরা আসার ফলে আগের থেকে সহজ হয়েছে। কিছু ঘটছে দেখলে আগে ক্যামেরা বের করে ছবিটা তুলে ফেলুন, তারপর নাহয় সেটিং পালটে, কম্পোজিশন পালটে আবার নতুন করে আরও ভাল ছবি তুলবেন। এটা বাচ্চাদের আর পশুপাখিদের ছবি তোলার জন্য বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য। আর তা সত্ত্বেও ছবি মিস হয়ে গেলে? সেটা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাবেন না। আবার অন্য ছবি তোলার সুযোগ আসবে, অন্য ছবি উঠবে।




ছবি তো তোলা হল, এর পর কী? আগেকার দিনে হলে প্রিন্ট করিয়ে অ্যালবামে ভরে রাখা হত, আর বাড়িতে লোকজন বেড়াতে এলে তাদের হাতে চায়ের কাপের সাথে সেই অ্যালবাম তুলে দেওয়া হত। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কাউকে ছবি দেখানোর জন্য চা খাওয়াতে হয় না, ফেসবুক কী ইনস্টাগ্রামে ছবি লাগিয়ে দিলেই সবাই দেখে নিতে পারে। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে, আর সেটা হল ডিজিটাল ছবি তোলার ব্যাপারে কোনও সীমা বাঁধা থাকে না, যেটা ফিল্মের যুগে থাকত। তাই আপনি ব্যান্ডেল চার্চ দেখতে গিয়ে চোদ্দশো ছবি তুলে ফিরতে পারেন। সেই সমস্ত ছবি কি ফেসবুকে দেওয়া উচিত? দিলে কটা দেওয়া উচিত? প্রথম প্রশ্নটার উত্তর অবশ্যই “না”, যদিও দ্বিতীয়টার কোনও উত্তর আমার কাছে নেই। শুধু মনে রাখবেন, ফটোগ্রাফার হিসেবে আপনি কতটা ভাল সেটা লোকে আপনার তোলা সবথেকে খারাপ ছবিটা দেখে বিচার করে। তাই সবথেকে ভাল পাঁচটা ছবি লাগালে ফটোগ্রাফার হিসেবে আপনার যা সুনাম হবে, মাঝারি মানের পঞ্চাশটা লাগালে তার থেকে কম সুনাম হবে। আমি এ ব্যাপারে আমার অত্যন্ত প্রিয় মার্কিন ফটোগ্রাফার অ্যানসেল অ্যাডামস-এর বলা একটা কথা মনে রাখি, যদিও মেনে চলতে পারি না সবসময়ে:


“Twelve significant photographs in any one year is a good crop.”


এই লেখায় যে কটা ছবি দেখলেন, সেগুলো তুলতে আমায় গড়ে অন্তত তার দশগুণ ছবি বাতিল করতে হয়েছে। নিচে ডান দিকের ছবিটা তুলতে আমায় পয়ঁত্রিশটা ছবি তুলতে হয়েছিল, সেগুলো বাঁ দিকে ছবিটায় দেখা যাচ্ছে। তাই আর দেরি না করে এবার আপনারাও ছবি তোলা আর বাতিল করা শুরু করুন। আর মনে রাখবেন, এটা একটা শিল্প, তাই আমার বলা সব নিয়মগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েও ভাল ছবি তোলা সম্ভব। কিছুদিন অভ্যাস করলেই দেখবেন আপনার ছবি তোলার হাত আগের থেকে অনেক ভাল হয়ে গেছে।



                                                     



   

 

No comments:

Post a Comment