নিশিপালনের প্রহরে এবং বিশ্বনাথ মাঝি ও বিভূতিভূষণের গ্রাম -স্রষ্টা লুৎফর রহমান- এর সঙ্গে কথোপকথনে রাহুল ভট্টাচার্য।
হালের ক্রেজ লুৎফর রহমান জন্মেছিলেন ১৯৭৩ সালে নদিয়া জেলার চাকদহ থানার অন্তর্গত বিষ্ণুপুর গ্রামে। শৈশব, কৈশোর, প্রথম যৌবন কাটিয়ে এখনও সেখানেই বসত করেন। তাঁর গল্পের চরিত্রগুলোও ওই অঞ্চলের অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষ যাদেরকে তিনি ছেনেছুনে দেখেছেন। তাঁদের মুখের ভাষাই প্রাণ পেয়েছে তাঁর গল্পের কথকথায়। রাজনীতি সচেতন লুৎফর আসলে একজন ক্ষ্যাপা অক্ষর-সাধক যিনি এস্টাব্লিশমেন্টের থোড়াই কেয়ার করেন। [করোনা কালে অনলাইন সাক্ষাৎকার হওয়ায় সাক্ষাৎকারের বৈঠকি মেজাজ আনা সম্ভব হয়নি। তাই টেলিফোনেই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পঞ্চালিকা আন্তর্জাল সাহিত্য পত্রিকার প্রধান কর্মাধ্যক্ষ রাহুল ভট্টাচার্য।]
The oxford critical and cultural history of Modernist Magazines - এর শুরুটাই হচ্ছে Malcolm Cowley-এর একটা মজার উক্তি দিয়ে। সেটা হল - Usually the history of a little magazine is summarised in its format. The first issue consists, let us say, of sixty-four pages, with half tone illustrations, printed on coated paper. The second issue has sixty-four pages, illustrated with line cuts. The third has only forty-eight pages; the fourth has thirty-two, without illustrations; the fifth never appears.’ আপনিও কি মনে করেন লিটিল ম্যাগাজিন একটা ক্ষণস্থায়ী ক্ষেত্র, ফলে এর মূল্য বা গ্রহণযোগ্যতা কম?
আমি ম্যাগাজিন শব্দটাকে আত্মীয় ভাবি। স্বপ্ন, স্বর ও স্পর্ধার এক আশ্চর্য বীজপত্র। তার আয়ু আমাকে ভাবায় না, বরং যারা ভাবে বা টানাটানি করে, তাদেরকে সন্দেহ করি। তাদের মতামত ও প্রজ্ঞা দুটোকেই লোক দেখানো মনে করি ও মনোযোগ দেবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
শোনা যায় যে, লেখকের অবর্তমানেই তার লেখার প্রকৃত মূল্যায়ন শুরু হয়। তাহলে আজকের লেখা কি সমসাময়িকতাকে স্পর্শ করতে পারে না? নাকি আজকের পাঠক এই সময়ের লেখার জন্য তৈরি নয়? অর্থাৎ আমি আজকে যা লিখছি তা দিয়ে কি কখনই আজকের মানুষকে উজ্জীবিত করার উপাদান রাখতে পারছি না? রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনকালেই খ্যাতির শীর্ষে ছিলেন।
জনপ্রিয়তা সাহিত্য সংস্কৃতির বিষয় নয়, অন্তত আমার তেমনই মতামত। লোকমানসের মারমুখী যৌন কল্পনাকে প্রশ্রয় দেওয়া সাহিত্যের কাজ বলে মনে করি না। আর রবিঠাকুর শব্দটার মূল্যায়ন আজও করা গিয়েছে কিনা জানি না।
আপনি লেখক হিসেবে পত্রিকা প্রকাশকের কাছে সাহিত্যের কোন ধারাকে বা থিমকে আলাদা করে তুলে ধরতে চান যা একজন সম্পাদক তা প্রকাশের মাধ্যমে নতুন কিছু পাঠককে দিতে পারবেন যা নতুন দিশা দেখাবে। আসলে সম্পাদক স্বাভাবিকভাবেই চাইবেন তার পত্রিকায় আধুনিক বা নতুন কিছু বিষয় উঠে আসুক।
লেখক নিজের কাছে দাঁড়িয়ে আছে কিনা সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। লেখক হিসেবে দেখা মহাকর্ষীয় সূত্র নয়।
ছাপানো পত্রিকা ও ই-ম্যাগাজিন এই দুটোর কিছু ভিন্ন ভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। অনলাইন মাধ্যমে পাঠক এবং লেখকের সম্পর্ক আরও বেশি ঘনিষ্ঠ, কারণ সেখানে নিয়মিত ফিডব্যাক পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে একজন লেখক হিসেবে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
যে লেখকের হাত পাঠকের কাছে পাতা আছে, এটা নিয়ে তারা ভাবুক।
আরেকটি বিষয় জানতে চাই, কেবল কবিতা বা অন্য সাহিত্য নয়, আজকের দিনে রাজনৈতিক দর্শন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সিনেমা, গান, কবিতা প্রভৃতি মাধ্যমে কমে আসছে। যেটুকু আসছে তা অত্যন্ত স্থূল বা মোটা দাগে। আমাদের কি মতাদর্শকে শিল্পে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে খামতি থেকে যাচ্ছে? আপনি কি মনে করেন লেখক রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা সরাসরি প্রকাশ করতে চাইছেন না?
মেধাহীনতা অশিক্ষিত পটুত্ব আজ সব মাধ্যমে জাঁকিয়ে বসেছে। এটা ইতিহাসের লজ্জা। মানুষ সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য জীব, আবর্জনা ঘরে তোলে না। সাহিত্যের জন্ম দিতে পারেন রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও সৎ মানুষই। কারণ মানুষ রাজনৈতিক জীব।
মূলস্রোত বলে কিছু নেই। মানুষ সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত, দেশচ্যুত হয়ে গেছে। এই সময় আমরা বেঁচে আছি। তবু যার তাতে কিছু যায় আসে না এবং আইসক্রিম কেন ঠান্ডা বিষয়ে সাহিত্য করছেন তারা মগা। মানুষের কেউ নন। সাহিত্যেরও নন।
সাহিত্য কেবল পরিপার্শ্বকে স্পষ্ট করে দেখার চোখ তৈরি করে তাই নয়, তা পাঠককে ভেতর থেকে তৈরি করার একটা মাধ্যম। আধুনিক সাহিত্য চর্চায় পাঠকের সেই অন্তর্দৃষ্টি বা অন্তর উন্মোচনের কোন সম্ভাবনা কি তৈরি হচ্ছে?
না! কারণ বহুকাল হল মানুষ রাষ্ট্রের ফসল হয়ে গেছে সম্পূর্ণ ভাবে। মানুষের মানুষ হবার দিন ফুরিয়েছে। তাই সে ভাবতে বাধ্য এবং ভাবে, যেভাবে রাষ্ট্র চায়। এর বাইরে বের হতে মানুষ ভুলে গেছে। বর্তমান সাহিত্যের সেটা সবচেয়ে বড় সঙ্কট। সত্যের ওপর, মানবসত্যের ওপর রাষ্ট্রের একচেটিয়া দখলদারি না মানা বর্তমান সাহিত্যের প্রধান দায়...
আপনার দুটি বই “নিশিপালনের প্রহরে” এবং “বিশ্বনাথ মাঝি ও বিভূতিভূষণের গ্রাম”-এর মধ্যে “নিশিপালনের প্রহরে” প্রায় কুড়ি বছর আগে প্রথম প্রকাশিত হয় যা বিগত বইমেলায় পুনর্মুদ্রিত হয়। এই দুটি বই পাঠক সমাজে কীরকম প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে বলে আপনার মনে হয়?
প্রভাব বিস্তার করেছে কিনা জানি না। ৯৭ সালে নিশিপালনের প্রহরে প্রথম প্রকাশ পায়। তারপর দীর্ঘদিন পর, ২০২০ সালে ভাষালিপি পুনর্মুদ্রণ করে। তৃতীয় মুদ্রণও সমাপ্তির পথে। শুনি।
এটা আমাকে অবাক-খুশি দুটোই করেছে। লজ্জাও যে পাইনি, তার ঠিক কী!
পাঠক কাকে বলে, তার কেমন মাপ, কেমন তার চালচিত্র, দেখা হয়নি। কারণ নিজে আমি দীর্ঘ পঁচিশ বছর সাহিত্য সংস্কৃতি, শিক্ষা ও তদ্নিবিষ্ট সমাজ থেকে বহুদূরে বসত করি। আমার পরিমন্ডলে ইতর নিরক্ষর অন্ত্যজ মানুষের ছয়লাপ। ওষুধি করার জন্যও কোনও শিক্ষিত মানুষের প্রয়োজন পড়েনি আমার নগণ্য বাঁচায়। ফলে ভুলে গিয়েছি সৌম্য সুশীল মানবসমাজের ভালো ও মন্দ। এখন চিনছি, দেখছি, ভালবাসছি নতুন করে। সুতরাং নিশিপালনের প্রহরের এই যে বিক্রি, কাকতালীয় কিনা জানা হয়নি।
তবে আমি নিজে থেকেই একটা অপেক্ষা নিয়ে বাঁচি। তা হল পাঠকের মুখ দেখার অপেক্ষা।
আজ কৃষিচ্যুত মানবচ্যুত “কলিম” এর জন্য আমার ব্যথা যতখানি, “পাঠক” ঐ কলিমের আত্মার আপন কিনা, জানতে আকুলতা আসে আজকাল.....
সুতরাং প্রভাবিত কে, পাঠক না লেখক, ভাবা দরকার।
ফেসবুক সাহিত্য এবং ছাপা সাহিত্য এ দুটোকে আলাদা করে দেখেন? অর্থাৎ দুটোর মূলগত পার্থক্য অনুভূত হয়? বর্তমানের অনেক লেখকই ফেসবুক বা ই-ম্যাগাজিন এর মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন বা উঠে আসছেন। তাদের লেখা সমাদৃত হচ্ছে, এমনকি বইমেলায় বেস্ট সেলার পর্যন্ত হচ্ছে। আপনার কি মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়া এখন লেখকের প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম?
ফেসবুক সাহিত্য আর ছাপা সাহিত্য কার আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা বেশি আমি বোধহয় জানি না। কারণ, ছাপা সাহিত্য-সংস্কৃতির জগত আমার কাছে অচেনা হয়ে গেছে। যে ক’টি সাহিত্য পত্রিকায় আমার খান চার-পাঁচেক ছোটগল্প এযাবৎ বেরিয়েছে, তার কোনওটিই আমার দেখা হয়নি।
আমি উদাসীন থেকেছি স্বভাবদোষবশত। কখনওই সাহিত্যিক সঙ্গ করা হয়ে ওঠেনি, ডাকিনি কাউকে, ডাক শুনতেও পাইনি কারো। ফলে মাধ্যম চর্চার দিক থেকে আমি প্রায় সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ থেকে গিয়েছি! কারা বেস্টসেলার কারা ব্যাডসেলার কারা মাঠের বাইরে এসব আমার কৌতূহলের মধ্যে পড়ে না।
ফেবু হল আমার বেড়ানোর জায়গা। এখানে অনেকে লেখেন, তাদের লেখা পড়ি। মতামত জানাই সাধ্যমত। কারণ, ফেবুতে সেটাই রেওয়াজ! এখানে অনেক লেখা নিষ্ঠাসহ হয়, যা, যে কোনও মহৎ লেখার গোঁড়ার শর্ত। বাকিটা সুশীলরা জানেন, কারণ, তারা সামাজিক মাপকাঠি!
বই মার্কেটিং ও বিক্রির ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা কতটা আছে বলে মনে করেন?
বই বিক্রি বিজ্ঞাপন-নির্ভর, অনেকটা। তবে পাঠক হল লেখকের শ্রেষ্ঠতম মিডিয়া, তারা কোথায় কীভাবে রটনার কাজ চালায়, এটা আমার বোধের বাইরে!
তবে যে কোনও বই বিক্রির ব্যাপারে সামাজিক মাধ্যমগুলোর ভূমিকা যে বহুতরভাবে দায়ী, এটা টের পাই।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস মাত্র দুটো উপন্যাস দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন বেশি লেখার দরকার নেই, বরং মানসম্মত লেখার দরকার আছে। এ বিষয়ে আপনার মত কি?
ভাল ফলন পেতে জমির যত্ন প্রয়োজন। রোদে জলে বাতাসে জমিকে জো হতে দেবার বিশেষ দরকার পড়ে! তারপর দরকার লাঙল দিয়ে জমিকে ফালাফালা করার। জমি যত লাঞ্ছিত হবে লাঙলের ফালে জমির মাটি তত দানাময়, সরেস সুফলা হয়ে উঠবে। কৃষিকর্ম তত সাফল্য পাবে, ভাল ফলন হবে!
সাহিত্য হল কঠিনতম কৃষিকাজ। ভাল ফলন পেতে লেখককে পোড়খাওয়া নিবিষ্ট কৃষক হতেই হবে! বহুপ্রসবিনী জমি নোনার ঘায়ে মরে যায়, কৃষকও মরে।
প্রতিটি যুগের সাহিত্যের একটা নিজস্ব অবদান থাকে। একজন লেখক হিসেবে আপনার কাছে জানতে চাইছি, চলমান সময়ের বাংলা সাহিত্যের অবদানগুলি কি লক্ষ্যগোচর হয়েছে?
আপাতজটিল একটা পাখতুনি উপপাদ্য মনে পড়ল।
“যা বলার জন্য তুমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তা কার কথা আগে বিবেচনা করো, নিজের হলে বলো না। কারণ তোমার কথাটা তোমার মুখের মাছি সবচেয়ে বেশি জানে।”
“দেখা” তো আসলে একটি রাজনৈতিক জারজ, যার পিতার নাম মান্ধাতা, মাতার নাম অভিসন্ধি!
আমার দেখা থাকে। দেখানোর কথা আমি কদাচ ভাবি না। কারণ, দেখানোর জন্য অনেকখানি যে বাহাদুরি থাকে নয় তো মুন্সিয়ানা, তার ঘোরতর বিরোধী আমি।
আমার “দেখা”, ডোবে ভাসে ঘুরপাক খায় নিজেরই হাঁটুজলে নয়ত ডুবোজলে। আমি কেবল আমার দেখার দাগ, খতিয়ান ও মৌজা নম্বরের অনতিহাসকে কটূ ও কূটঅভ্যাসে রপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাই।
জানি, মানুষ শেষ পর্যন্ত সেই ভাণ্ড যে হাসতে ও কাঁদতে জানে বহুরকমভাবে। একটি সমতল জীবন, একটি নরম মাটির দিগন্ত, একটি উৎসন্নপ্রবণ সময় অনবরত ছিঁড়ছে মানুষের আত্মিক বাঁচা ও কবরটাকেই। এটুকু দেখা আমার কাজ এবং সেক্ষেত্রে একটি গাছের পাতাকেও আমার উদ্গ্রীব প্রতিপক্ষ লাগে। একজন ভিখারির অসহায়তাকেও আমার মারাত্মক প্রতারণা ঠাহর হয় অধিকাংশ সময়! কারণ পাতাটি ও ভিখারিটি এককে সত্য।
গল্পকার হলেন তিনিই, যার, নিজস্ব কোনও সমাজ নেই, রাষ্ট্র নেই। ধর্মত সে বিধর্মী। রাজনৈতিকভাবে সে ঝান্ডা নয়, ঝান্ডার নিচের দণ্ডটির মত, সুঠাম ও নিবেদিত।
এটাই হল আমার সময়ের কাছে রাখা বার্তা.....
বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যের সাথে তুলনা করলে আজকে যে বাংলা ভাষার সাহিত্য রচনা হচ্ছে, অর্থাৎ যারা লিখছেন তাদের লেখার মান অন্যান্য ভাষায় লেখার মানের তুলনায় কতটা উৎকৃষ্ট বা বিচার্য?
বাঙালি লেখকেরা বেশিরভাগ সময় লেখেন। অল্পই পড়েন। মানুষের কেন্দ্রবিন্দু কোথায়, তা জানতে যে মানব অন্বিষ্টতা দরকার, তা তাদের না থাকায় লেখক জীবনে মারাত্মক ক্ষয় আসে। তা থেকে তাদের মুক্তি মেলে না। প্রতিভা নয় বাঙালি লেখকরা মানবিক ও সমাজনৈতিক রক্তাল্পতায় ভুগে সাবাড় হয়ে যায় সবচেয়ে বেশি! ফলে, জাঁকিয়ে বসে অশিক্ষিত পটুত্ব....
আজকাল কিছু মেধাহীন চটুল ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি পাঠকের আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে। এর কারণ কি জাতি হিসেবে বাঙালির চাহিদা পরিবর্তন হচ্ছে? অথবা সাহিত্য চাহিদার এমন কিছু পরিবর্তন হচ্ছে যা বাংলা ভাষা হয়ত যোগান দিতে পারছে না।
সময় ধরে জানি না। বাংলা ও বাঙালির মানস সম্বন্ধে আমরা সকলেই কম বেশি জানি। একধরণের চূড়ান্ত কেওয়াস বাঙালির মনের গড়নকে অসুস্থ করে রেখেছে সুদীর্ঘ সময়। মন্বন্তর, দাঙ্গা, দেশভাগ ও তথাকথিত কেরানি তৈরির শিক্ষাব্যবস্থা হয়ত তার জন্য দায়ী!
জাতি হিসাবে হীনমনা, কলঙ্কিত, লাঞ্ছিত হওয়া বাঙালির পক্ষে খারাপ হয়েছে অনেকটা!
বাঙালি মনে করে, পশ্চিম এগিয়েছে যতটা ততটুকু তাদেরও এগোনো দরকার। আর এটা করতে গিয়ে বাঙালি মরমে ও সাহিত্যে নকলনবিশ অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে কখন, তার খেয়াল সে রাখেনি।
মানুষ পিছিয়ে থাকলে সাহিত্যকেও যে পিছিয়ে রাখতে হয়, তাতেই জাতিসত্ত্বা ও সাহিত্যের সত্যিকারের মুক্তি আসে এটা বাঙালি লেখকেরা বুঝতেই শেখেনি আজও!
অবশ্য বাঙালি লেখকেরা মূলত মধ্যবিত্ত সমাজ থেকে আসেন, তারা মেধাতেও মধ্যম মানের....!
ফলে তথাকথিত বাংলাসাহিত্য মধ্যম বৃত্তের স্বভাব-দোষে আক্রান্ত আগাগোঁড়া।
কুকুর হইতে সাবধান মার্কা একটা সাদা ধবধবে বাড়ি, কেরানির চাকরি, মানসিকতায় মধ্যযুগীয় একটা লোক বাংলা সাহিত্য করেন, যেমন রোজ বিকালে কেউ কেউ ফুল কেন লাল ভাবেন, সেইভাবে!
ফলে বাঙালি পাঠক ও লেখক নিয়ে কিছু বলা বা অনুধাবন করা সবচেয়ে কঠিন! মার্জনা করবেন, আমি তো আরও বোকা লোক, এ সম্বন্ধে বলার পক্ষে!
‘নিশিপালনের প্রহরে’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৭ এর বইমেলায়। আজ থেকে ২৩-২৪ বছর আগে। আপনার তখন একুশ। ওই বইয়ের ছ'টি গল্প কি খুব কাছাকাছি সময়ে লেখা? প্রথম কোন গল্পটা লিখেছিলেন? লিখে ফেলার তাগিদটা কীভাবে এসেছিল?
মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার পর আমি হঠাৎ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি! সমাজ রাজনীতি ও মানুষ সম্পর্কে আমার কৌতূহল আমাকে প্রায় হাটুরে ও বেহায়া করে তোলে।
আঁতুরঘর থেকে শ্মশান-গোরস্থান পর্যন্ত আমি মানুষের পিছন নিতে শুরু করি। মানুষ কত রকমভাবে হাসে ও কাঁদে তা আমি দেখে ফেলি, দেখে ফেলি তার প্রেম ও পিপাসার গড়ন।
জন্মসূত্রে বেশকটা খালবিল ও গঙ্গানদী আমি আমার চৌহদ্দিতে পেয়ে গিয়েছিলাম, সেইসব আমাকে পেয়ে বসল খুব। খোলা চোখে মানুষ দেখা এবং ফিরে এসে ঐ বিলখালের নিরিবিলিতে শুয়ে বসে আমি প্রায় উৎসন্নে চলে যেতে পারলাম। সবচেয়ে আশ্চর্য, তা নিয়ে আমার কোনও আক্ষেপ রইল না।
জীবন আমাকে ভীষণ একলা ও নিস্পৃহ করে তুললো। পড়াশোনায় ছেদ এল। সেটাকেই কেন জানি বাহাদুরি ভেবে বসলাম। অথচ বাড়িতে তখন নুন পান্তারও জোগান আর নেই! বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। একটা ভাইও প্যারালাইজড হয়ে বিছানা নিল জনমের মত।
তেমনই এক দিনে বোনকে দেখতে এল পাশের গ্রামের এক সম্পন্ন পরিবারের ছেলে। বোন তখন ক্লাস এইটে। বড় হতেও শেখেনি, শেখেনি শরীরের যত্ন নিতে, সম্বন্ধটা ভেঙে গেল।
সেটা আমি শুনলাম, মানিকতলার হোমিওপ্যাথ হাসপাতালে বসে। কারণ আমার ছোটভাই তখন ঐ হাসপাতালে ভর্তি ছিল, হাতে ছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন কলকাতায় বৃষ্টি হল প্রায় সারারাত। ঘুম এল না।
এক নার্স দিদির কাছ থেকে খাতা কলম নিয়ে কী যেন মনে হতেই লিখতে শুরু করলাম গল্প!
কিছু না জেনে কিছু না বুঝে যা লিখলাম, তার নামও দিলাম ‘মরণ’.... সাক্ষী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আর মানিকতলা হাসপাতালের সেই নার্স দিদি।
বাড়ি ফিরে নেউলে বিলের বাঁশবাগান ধরা করলাম প্রায়!
জীবন জলে নয়, ঐ বিলের বাঁশবাগানে মিশে মাটি হয়ে গেল তারপর!
পরপর লিখলাম ‘ফুলো ফেউটু’, ‘রাতকানা নিশিপাখি ও কলিমের গল্প’ আর ‘মরণে আমরণে’ পরবর্তী দু’বছরের মধ্যে!
আমারও সারাটা জীবন যেন বাঁচামরা সমেত চিত্রিত হয়ে গেল। বন্ধ হয়ে গেল জীবনের দুয়ার, ফেরার পথ। কিংবা কোথাও পৌঁছোনোর পথ রুদ্ধ হয়ে গেল এই জীবনের মত।
ঐ ছ’টা গল্প আমাকে লোকজন থেকে, সভ্য, সৌম্য, মানব সমাজ থেকে বিদায় করে দিল একেবারে।
আমি না পারলাম কোথাও পৌঁছাতে, না পড়লাম মাটিতে.....ঝুলে রইলাম।
এখনও ঝুলে আছি সেইভাবেই.....
দীর্ঘ প্রায় দু'যুগ আপনার আর কোনও বই আমরা হাতে পাইনি। এই দীর্ঘ সময় আপনি কি লেখালেখি থেকে দূরে ছিলেন?
হ্যাঁ! নিশিপালনের প্রহরে লেখা হল। আমিও পথে গিয়ে বসলাম। দীর্ঘ আড়াই দশক আমি আর লিখিনি কিছুই!
উলটো আরও ঘুঁচে গিয়েছি অজানা অচেনা বসত বসতির দিকে। সেখানে বসেই লেখা ‘কানাহোসেন’, ‘মালেক মওলা’, ‘হাতেম ছৈয়াল’ এবং ‘দুয়ারবাসনি’...চারটে উপন্যাস সবই অপ্রকাশিত। শুধু ‘হাতেম ছৈয়াল’ উপন্যাসটি কলকাতার ভাষালিপি নিয়েছে। সামনেই হয়ত বই আকারে প্রকাশ পাবে!
‘মরণে-আমরণে’-এ গল্পের শেষে একটা প্রশ্নোত্তর পর্ব চলতে থাকে। অন্ত্যজ মানুষের প্রশ্নঃ তাহলি আমরা? (কে যেন বলে যায়) শূয়োরের বাচ্চা। এটাই কি প্রান্তিক মানুষের পরিচয়ের শেষ কথা হয়ে থাকবে?
মানুষের সৃষ্ট শব্দে লেখা ইতিহাস বই, ভূগোল বই ও বিজ্ঞান বই পড়ে আমার সময় গেছে না ফলবতী হয়েছে, জানি না!
মানুষের ডানে বামে সামনে পিছনে ঘুরঘুর করে বুঝেছি মানুষই হল মানুষের অন্তিম পথ, পিপাসার জল ও ইহকাল।
কিন্তু মানুষের পাঁজরে সভ্যতা ও অপবিজ্ঞানের ক্ষত বড় গভীর। বহুকালব্যাপী বিদ্যমান। আমি জানি না মানুষ শব্দের মানে মানুষ কীভাবে বদলাবে! আপাতত তার কোনও সম্ভাবনাও নেই হয়ত! হিন্দু সমাজ ও মুসলমান সমাজ আজ যা তাতে মানুষকে আমার এই দুই সমাজ বহির্ভূতই লাগে। শূয়োরের বাচ্চাই মনে হয়.....
কেউ কেউ ‘নিশিপালনের প্রহরে’র গদ্যভাষা নিয়ে বলছেন, এ এক অভিনব গদ্যভাষা ‘বাংলা ভাষার উঠোনে’। এ বিষয়ে কিছু বলবেন।
গদ্যভাষা নিয়ে বলার কিছু নেই। কারণ আমি চাইনি তথাকথিত ভদ্রলোকি তথা মধ্যবিত্তের ভাষায় কলিম, ভুদান, হরাপাগলা, ছোরাপকে লিখি! যে জীবন মধ্যবিত্ত সমাজ ও শিক্ষার কেউ না, সেই জীবনের কথা ও কোলাহল কেন বিদ্যালয় পোষিত ভাষায় লেখা হবে! আমি অন্তত পারিনি। তার জন্য আমাকে খেসারত বাবদ দিতে হয়েছে আমার নিজস্ব বাঁচা ও মরার সময়টুকু সম্পূর্ণ। আমার সফলতা ও বিফলতা জানে বাংলাভাষা ও বাংলা সাহিত্য; আমি নই!
ফেসবুকে আপনার নিত্য ক্রিয়া-বিক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কাব্যভাষায় প্রকাশিত। আপনার কাব্যভাষা আর গদ্যভাষা ঠিক আলাদা করা যায় না। গদ্যভাষা কাব্যময়, কাব্যভাষা গদ্যময়। কিন্তু আজ পর্যন্ত আপনার কোনও কাব্যগ্রন্থ আমরা পাইনি। অদূর ভবিষ্যতে আপনার একটা কাব্যগ্রন্থ কি আমরা আশা করতে পারি?
কী হবে সেই ভাষা যা পাগলে বুঝবে না! গদ্যভাষার গড়নে আমার মন কষ্ট পায়। পদ্যভাষার গড়নে আমার চৈতন্য ডোবে না, হাবুডুবু খায়।
মানুষ মুখ ভরে নয় মন ভরে কথা বলেন। আত্মাভরে কাঁদে কিংবা হাসে। মানুষ শুধু চোখ দিয়ে নয় স্বপ্ন দিয়ে দেখে তার বাঁচা মরা ও প্রেম.... ফলে সে পুরো গদ্যভাষায় নয় আবার পুরো পদ্যভাষাতেও নয় কথা বলে ভিন্ন আরেকটি গড়নে। আমি মানুষের কথা বলার সেই ভঙ্গি ও সামর্থ্যটিকে রপ্ত করার চেষ্টা করি আমার লেখালেখিতে। ভাল না মন্দ তা বলতে পারব না, জানিও না!
পাঠ প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে একজন লিখেছেন, গল্পের মধ্যে আপনি একটা শতাব্দীকে ধরতে পেরেছেন। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া কথার ইন্দ্রজালে আপনার সক্ষমতার প্রত্যয়ন। এ প্রেক্ষাপটে আমরা কি আপনার কাছ থেকে আরেকটু বৃহৎ পরিসরের কিছু অর্থাৎ একটা উপন্যাস আশা করতে পারি?
পাঠ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমার কীই বা বলার থাকে! নিজে আমি সম্পূর্ণ উৎসন্নে গিয়ে জানি, মানুষ হল একটি মৌলিক মেধাবী জীব! তার ভাবনা ও ভালবাসার গড়ন তার জয়-পরাজয়ের জীবনপথ বড় জটিল। তাই, শেষপর্যন্ত যে, কী ও কেমন তা সিদ্ধান্ত হবার নয় কিছুতেই!
জীবনে ও মরণে প্রায় নিঃস্ব একজন মানুষ, যার মরে যাওয়াটুকু ছাড়া গত্যন্তর নেই, তাকেও দেখেছি শেষপর্যন্ত চরম অপেক্ষাময় আরেকজন মানুষেরই কাছে! মৃত্যুপথগামী মালেক মওলাকে আমি চিনতাম, চিনতাম কদবানু বলে হাভাতে হাঘরে কোনও এক মানুষীকে! জীবন তাদের সেই সুযোগ দেয়নি যাতে তারা দুজন মানুষ ভালবেসে বেঁচেবর্তে থাকতে পারে। সাধ স্বপ্ন তাদের অন্তিমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মালেক মওলার শ্বাস তখনও বয়ে যাচ্ছে সামান্যই। মালেকের মাথাটা কোলের মধ্যে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসেছিল কদবানু, মালেকের দেহটা একবার যেন নড়ে উঠল। হঠাৎ চোখ মেললো মালেক, কদুবানু ফোঁপাল, “তোমার ঘর কতদূর মালেক ভাই, আমি যে সারাটা জীবন তোমার কেড়ি আঙুল ধরে বসেই থাকলাম..৷ ”
শুনে আমি হতবাক!!
জীবনমরণের অন্তিমেও মানুষের কাছে মানুষের এই খোঁজ আমাকে দিন দুনিয়া সম্পর্কে উপসংহারহীন করে তোলে...দৃঢ় ধারণা হয়, যে, মানুষ হল মানুষেরই অনাবিষ্কৃত গুপ্তধন! তাকে শেষ পর্যন্ত জানা প্রায় অসাধ্য! তাকে সারাজীবন ধরে বুঝে গেলাম, কিন্তু কতটুকু বুঝলাম, নিজেও জানিনে!
সুতরাং পাঠক হিসাবে কোন কোন মানুষ আামার নিশিপালনকে কীভাবে আত্মীভূত করলেন, তা জানাও আমার বোধের অনেকটা বাইরে...!
সাহিত্যে উত্তরাধুনিকতা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
হাস্যকর লাগে!
শুনি অনেক কিছু ঐ ধরণের শব্দ ও তার প্রতিশব্দ, জানি, এসব রটিয়ে-টটিয়ে কারা মাতব্বরিটা চালু রাখে!
ঘেঁটো শিক্ষক ও লেঁটোবাজ অধ্যাপকশ্রেণি এসব করেন শুনি!
“বিশ্বনাথ মাঝি ও বিভূতিভূষণের গ্রাম” আপনার আরেকটি চটিবই। শোনা যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আপনার এই লেখাটি পড়ে আপনাকে খোঁজেন কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে। সেটার সত্যতা সম্পর্কে আপনি যদি কিছু বলেন!
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সম্পর্কে আমিও শুনেছি কথাটা। শুনেছিলাম তিনি কলকাতায় এসেছিলেন চিকিৎসার কাজে, তখনি তিনি কোনওভাবে আমার ঐ গদ্যটি পড়েন এবং কলকাতার বিশিষ্ট কিছু কবি ও লেখকের কাছে আমার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন বলে অনেক পরে জানতে পারি। তাও প্রায় কুড়ি বছর। অনেককে অনুরোধ করেন আমাকে যেভাবেই হোক তাঁর সামনে হাজির করানোর! কী ছিল তাঁর আগ্রহের কারণ, কেনই বা তিনি প্রায় বিছানাগত অবস্থায় আমাকে হন্যে হয়ে খোঁজেন জানা হয়নি!
এটা আমাকে ব্যথা দিয়েছে না মথিত করেছে জানি না। শুধু পরমকল্যাণময় এক ভাষা-বৃক্ষের সামনে আমি দাঁড়াতে পারলাম না সেই আক্ষেপ আমার এ জন্মে যাবার নয়!
বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং খ্যাতনামা সাহিত্যিক আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত মহাশয়ের প্রয়াণে বাংলার চলচ্চিত্র এবং সাহিত্য জগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলে কি আপনার মনে হয়?? যদি কোনও স্মৃতিচারণ করতে চান।
তাঁরা শ্রদ্ধেয়। বাঙালি হিসাবে নয় শুধু একজন সুশীল মানুষের গড়ন কেমন হওয়া উচিৎ তা আমি অনেকটাই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দেখে জানতে পেরেছি। এর বেশি বলার কিছু নেই।
আপনার পাঠক, ভক্ত, অনুরাগীদের উদ্দেশে কিছু বলবেন কি?
মানুষ ছাড়া মানুষের কোথাও পৌঁছোনোর নেই এটুকু নিজেকে বলি।
……………
" মানুষ হল মানুষেরই অনাবিষ্কৃত গুপ্তধন "..
ReplyDelete" মানুষ....যুক্তিগ্রাহ্য জীব, আবর্জনা ঘরে তোলে না ".... এরপর আর কীই বা বলার থাকতে পারে! অভিনন্দন বন্ধু লুৎফর💐💐
বলতে ভালো লাগছে,উত্তরগুলো জানা, লুৎফর রহমানের বিভিন্ন লেখা ও মন্তব্যে পঠিত। সাক্ষাৎকারটি সেইসব একত্রিত করেছে। পত্রিকার ধন্যবাদ প্রাপ্য। আবার কিছু কিছু প্রশ্নের মধ্যেই পক্ষপাতিত্ব থাকে, যেমন-- 'আজকের দিনে রাজনৈতিক দর্শন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সিনেমা, গান, কবিতা প্রভৃতি মাধ্যমে কমে আসছে। যেটুকু আসছে তা অত্যন্ত স্থূল' অথবা,'আজকাল কিছু মেধাহীন চটুল ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি পাঠকের আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে। এর কারণ কি জাতি হিসেবে বাঙালির চাহিদা পরিবর্তন হচ্ছে?' ইত্যাদি প্রশ্নের ধরন ও ধারক উত্তরদাতাকে একটা নির্দিষ্ট ও প্রচলিত উত্তরের দিকে ঠেলে দেয়। সেখানে সৎ উত্তর প্রশ্নের মূলগত বিপক্ষে যেতে বাধ্য, যা এখানে পরিলক্ষিত ও বিশেষ পাওনা। পত্রিকা কতৃপক্ষকে শুভেচ্ছা
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteকিছু কথা ঘুরপাক খেলেও এক কথায় দুর্দান্ত।
ReplyDeleteআমার দিক থেকে, অর্থাৎ বাংলাভাষার একজন সামান্য কলমচি হিসেবে বলবার কথা এই যে, লুৎফর প্রকৃত অর্থেই একজন অক্ষরসাধক। অক্ষর, যার হ্রাসবৃদ্ধি নেই, ক্ষরণ নেই, ঋণাত্মক ক্ষরণও না, সেই অক্ষরমালা বা উৎসভাষায় লেখে লুৎফর, সেই ভাষা আমি সাধ্যমতো, আমার মাপমতো শিখে নিতে চাই কিছু, এখন শিক্ষানবিশি করি... আর মাঝে মাঝে এ ভাষার হৃদ মাঝারে ঝাপ দিয়ে পড়ি, "প্রতি গল্প বিশ্বরূপ...না বুঝেই কাঁদি..." এছাড়া আমি আর কীই-বা বলতে পারি, লুৎফর রহমান, আমার বন্ধু, এটুকুই...এই কবি-জীবনে এর চেয়ে বড়, মহৎ কিছুর আশা আমি অন্তত করি না।
ReplyDeleteভালো লাগলো। মাটির ভাষায় কথা বলেন লুৎফর।
ReplyDelete