গল্পঃ ভিনগ্রহীঃ অনিরুদ্ধ সেন




মুস্তাক মালদার এক মাঝবয়সি গ্রামবাসী। এককালে তাদের পিতৃপুরুষ ছিল একখণ্ড ছোট্ট জমির সাথে বাঁধা। কিন্তু দেশবিদেশের অর্থনীতি গতিশীল হওয়ার সাথে সাথে তাদের স্বাধীনতাও ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল। প্রথমে তাদের জমিখণ্ড দেনার দায়ে মহাজনের কাছে বিকিয়ে যাবার ফলে তারা স্বাধীন খেতমজুরে পরিণত হল। এখন তারা নিজেদের শ্রম যেকোনও স্থানীয় ভূস্বামীর কাছে বেচতে পারে। তারপর ভারতের অর্থনীতি ‘নব্য উদারনীতি’র যুগে শেকলমুক্ত হওয়ার সাথে সাথে তাদের সামনে আরও অনেক বাড়তি সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল। মুস্তাকের পরিবারে ছ’জন সদস্য। অশক্ত বাপ-মা’কে বাদ দিলেও সে এখন ইচ্ছেমতো তার পরিবারের চারজন সক্ষম সদস্যের শ্রম বেচতে পারে। যেমন, দশ বছরের ছেলেকে শিশুশ্রমিক কন্ট্রাক্টারের হাতে তুলে দিয়ে বা কিশোরী মেয়েকে পুতুল বিয়ের পর নারী পাচারকারিদের কাছে বিক্রি করে মোটা দাঁও মারতে পারে। কিন্তু কতগুলো আদ্যিকালের মূল্যবোধ ছাড়তে না পারার ফলে সে শুধু তাদের মিয়াবিবির শ্রম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিল। তার স্ত্রী এখন কাছেপিঠের বাবুদের বাড়ি ঝিগিরি করে। আর সে নিজে নাম লেখাল স্থানীয় লেবার কন্ট্রাক্টার ছকু শেখের খাতায়। লোকটি পশ্চিম ভারতের বড় বড় বিল্ডারদের কাছে মজুরের জোগান দিত। এই কাজ করে কয়েক বছরেই সে বেশ লাল হয়ে গিয়েছিল। তার সুদৃশ্য তিনতলা বাড়ি, নতুন মডেলের গাড়ি, পুরু সোনার চেন – এ অঞ্চলে যা বড় একটা চোখে পড়ে না।     

সুতরাং একদিন তারা এক দঙ্গল শ্রমজীবি হাওড়া-মুম্বই মেলের গাদাগাদি ভিড়ের ‘চালু ডাব্বা’য় মুম্বই রওনা দিল আর খোদার মেহেরবানিতে হাত-পা আস্ত রেখেই সবাই গন্তব্যে পৌঁছল। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হল শহরতলি থানের এক ফাঁকা মাঠের পাশে, যেখানে বহুতল বাড়ির একটা কমপ্লেক্স গড়ে উঠছে। এক লালজি শেঠ এখান থেকে তাদের দায়িত্ব নিলেন। শেঠ তাদের কিছু আগাম টাকা দিলেন, তবে তাদের ‘আধার’ কার্ড নিজের কাছে রেখে দিলেন, যাতে কেউ চুপিসাড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী বিল্ডারের কাছে চলে যেতে না পারে। আর বলে দিলেন “মনে রাখিস, তোদের আসার খরচ আমি দিয়েছি।”

এবার তারা চটপট নিজেদের থাকার জন্য কতগুলো টিনের চালা বানিয়ে ফেলল। ষাট বর্গফুটের এক একটা ঘরে দু-তিনজন, তবু তারা ‘বিন্দাস’। কারণ তাদের যে ‘রোজ’ ঠিক হল, তা একজন খেতমজুরের পক্ষে অভাবনীয়। শেঠ অবশ্য জানালেন, আপাতত তাদের দৈনিক খরচ চালানোর মতো টাকা তিনি দেবেন। মাস দুই পরে বিল্ডার পেমেন্ট ছাড়লে ওরা বাকি টাকাটা থোকে পাবে।

এভাবে কিছু অলস গ্রাম্য চাষাভুষো রাতারাতি পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতের বাণিজ্য রাজধানী মুম্বই গড়ার কারিগর হয়ে দাঁড়াল। কাজটার মধ্যে চ্যালেঞ্জ ছিল। ভাড়া নড়বড়ে, সেফটি হেলমেট অপ্রতুল, বাতাস সিমেন্টের ধুলোয় ভর্তি। তবু তারা নিশ্চিন্তে কাজ করত পকেটে মন্দির বা দরগার থেকে আনা মন্ত্রঃপূত ফুল বা তাবিজ নিয়ে। আর ওগুলো কাজও করত। দু-একটা ছোটখাটো দুর্ঘটনা ছাড়া তো অদ্যাবধি কারও কিছু হয়নি।

সব মিলিয়ে, তারা ফুর্তিতেই ছিল। পরস্পরকে নিয়ে এমনকি পরস্পরের ভাষা বা ধর্ম নিয়ে ঠাট্টা-তামাসা অনর্গল চলত, কিন্তু এ নিয়ে মনোমালিন্য কখনও হত না। মাইনে সবার সমান হলেও কাজের তারতম্য ছিল। পাইলিংয়ের কাজে কায়িক শ্রম কম, তাই এই কাজ করত মূলত হিন্দুরা। আর ছাদ ঢালাই প্রচুর মেহনতের কাজ, সেখানে ডাক পড়ত শারীরিকভাবে পোক্ত মুসলমানদের। অন্তত এইজন্যই কন্ট্রাক্টারদের কষ্ট করে দূর থেকে কিছু মুসলমান মজুরকে ধরে আনতে হত।

কয়েক মাস পর মুস্তাক প্রথম বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারল। সে এক খুশির দিন। বৌকে ফোনে বলল, “বাজে খরচ করিসনি। টাকা যতটা পারিস জমিয়ে রাখ, মেয়ের বিয়ে দিতে হবে।” নিজেও সে সাবধানে খরচ করে। মুম্বইতে আনন্দ-ফুর্তির অঢেল সুযোগ, কত নানা তারার লাল-নীল রঙের এলাকা। কিন্তু সে নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত রেখেছে, শুধু বন্ধুবান্ধবদের সাথে একটু-আধটু চুল্লু ছাড়া। দু-এক বছর কাজের পর তার আশা হল, এবার যে টাকা জমেছে তাতে মেয়ের একটা সত্যিকারের বিয়েই দিতে পারবে।

মধ্যে একবার হুজুগ গেল, প্রধানমন্ত্রী নাকি বড়লোকদের হাত থেকে বড় বড় নোট কেড়ে তাদের রাতারাতি গরিব বানিয়ে দিয়েছেন। প্রথমে মুস্তাক ছকু শেখ, লালজি শেঠের দুরবস্থার কথা ভেবে একটু খুশিই হয়েছিল। কিন্তু অচিরেই সে বুঝল, মালিকদের হাঁচি হলে গোলামদের হয় নিমোনিয়া। কিছুদিন কাজ মুলতুবি, সবার কপালে দুশ্চিন্তার রেখা। তারপর আবার কোত্থেকে ধারফার জোগাড় করে বিল্ডার কাজ চালু করল, তাদেরও একটা হিল্লে হল। তবে বাজারটা তেমন তেজি নয় বলে গম্ভীরমুখো শেঠ তাদের ‘রোজ’ কিছুটা কমিয়ে দিলেন।

যাক, সেসব ওরা অনেক পেছনে ফেলে এসেছে। অতটা রমরমা না থাকলেও কাজ চলছে। দু-একবার সে বাড়িও ঘুরে এসেছে। ছকু শেখের মতো না হলেও তার চেহারা-পোশাকের যা জেল্লা, তাতে অনেকেরই চোখ ট্যারা হয়ে গেছে। একটু-আধটু হোঁচট খেয়েও জীবন এগোচ্ছিল রেলগাড়ির মতো বাঁধা পথে। এমন সময় এল করোনা পোকা।

প্রথমে কানাঘুষো – এই সাংঘাতিক পোকা নাকি বিদেশ থেকে এরোপ্লেনে করে এসে এখন আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। একবার ধরলে আর নিস্তার নেই। শাকিল অবশ্য উড়িয়ে দিল – ধুর, ওসব ফালতু বাত। সব বাড়িয়ে বলে ভয় দেখানো। কিন্তু গজানন বলল, সে শেঠকে বলতে শুনেছে হাল খুব খারাপ। মুম্বইয়ে দশ-বিশজন মরে গেছে, অন্য জায়গায়ও রোগ ছড়াচ্ছে। এবার বোধহয় কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।

তারপর একদিন প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিয়ে বললেন, দেশের সামনে এখন করোনার ঘোর বিপদ। তবে আমরা এককাট্টা হয়ে লড়লে এই যুদ্ধে অবশ্যই জিতব। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তিন দিন পর বিকেলবেলা সবাই মিলে বেরিয়ে মহোৎসাহে থালা বাজাল। কিন্তু তারপর শুধু বিল্ডারের কাজ নয়, সব কাজই বন্ধ হয়ে গেল। মুস্তাকরা একটা নতুন শব্দ শিখল – লকডাউন। এখন নাকি করোনা পোকার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় ঘরবন্দি থাকা। কিন্তু থাকে কী করে? প্রাকৃতিক কাজকর্ম করতে, জল আনতে তো তাদের বাইরে বেরোতে হবেই। আর কামকাজ না থাকলে পেটই বা ক’দিন ভরাতে পারবে?

শেঠ অবশ্য ভরসা দিয়ে বললেন, মাত্র দু-তিন হপ্তার মামলা। তারপর মহামারী থেমে যাবে, কাজ আবার শুরু হবে। ওরা ফেব্রুয়ারি থেকে পেমেন্ট পায়নি। তবু সবার হাতে কিছু টাকা ছিল। তাই ততটা পরোয়া করল না। গুড্ডু যাদব অবশ্য বলতে লাগল – এখানে থাকলে বেকারি, বিমারি। তাই ঘরে ফিরে যাওয়াই ভালো। প্রথমে তাকে কেউ পাত্তা দেয়নি। কিন্তু যত দিন গড়াতে লাগল, লকডাউন বাড়তে থাকল, আশঙ্কার কালো ছায়াটাও তত লম্বা হতে লাগল।

শোনা যাচ্ছিল, সারা দেশ পোকার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে এককাট্টা। সবাই তাদের মতো আটকে পড়াদের মদত দেবে। তাদের মুফতে রেশন দেওয়া হবে। অনেক খেটেখুটে রেশন জুটলও, কিন্তু তাতে বড়জোর একবেলা চলে। ক্রমে ওদের ট্যাঁক খালি হতে লাগল। একদিন গুড্ডু বলল, অনেকে ঠিক করেছে হেঁটেই বাড়ি ফিরে যাবে। বিদেশ-বিভুঁয়ে অনাহারে, রোগে মরার চেয়ে ঘরে বিছানায় শুয়ে মরা ভালো।

মুস্তাককেও ঘর টানতে লাগল। খবরে যাই বলুক, বিপাকে পড়ে মানুষ কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। আশেপাশের ‘খোলি’র মানুষদের সাথে তাদের বেশ ভাব ছিল। পরস্পরকে তারা কখনও পর মনে করত না। সেখানকার দোকানপত্রে তারা ছিল নিয়মিত খদ্দের, জিনিস কিনতে গিয়ে হাসিঠাট্টা লেগেই থাকত। এখন সেই লোকগুলোই কেমন বাঁকা চোখে তাকায়। ভাবটা যেন – কাজকম্ম নেই, এই বাইরের আপদগুলো এখনও এখানে কেন? আর কেনাকাটা করার সামর্থও তো দিন দিন কমে আসছে।

না, দেশেই ফিরতে হবে। কিন্তু ফেরে কী করে? গাড়িঘোড়া সব বন্ধ, অনেকে তো স্রেফ পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছে। তবে ওটা কোনও কাজের কথা নয়। মুস্তাক শুনছে খিদেয়, তেষ্টায় এই ভুখা মানুষদের অনেকে পথেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর বাংলা তো গুড্ডুর মতো ‘ভাইয়ালোগ’দের গাঁ থেকে আরও অনেক দূরে। সে অন্য ফন্দি আঁটল। শুনেছে, অনেক ঘরেফেরাদের পুলিশ রাজ্য বর্ডারে আটকে দিচ্ছে। কিন্তু খাবারের ট্রাকের অবাধ ছাড়। প্রথম কিছুদিন পুলিশলোগ কাগজপত্তর নিয়ে ঝামেলা করত, এখন মন্ত্রীলোগ ডাঁটিয়ে দেওয়ার পর তারা ট্যাঁ-ফো করে না। মুস্তাকের এক সর্দার ট্রাক ড্রাইভারের সঙ্গে দোস্তি হয়েছিল। সে তার একটা খাবার চালানের ট্রাকে খালাসির কাজ করবে বলে লাইন করে নিল। খাবারদাবার ওঠাবে, নামাবে। অন্য ফাইফরমাসও খাটবে। তার জন্য কোনও মজুরি পাবে না, কিন্তু তাকে ফ্রি-তে তার ‘গাঁ’য়ের দিকে যতটা সম্ভব এগিয়ে দেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে শুনল করোনা পোকার সঙ্গে যুদ্ধে দেশ আরও এককাট্টা হয়েছে। থালি বাজাবার পর সারা দেশে একত্রে দিয়া জ্বলেছে। তার তেজে পুড়ে ব্যাটা পোকার দফারফা হল বলে।     

পথে ঝামেলা এড়াতে মুস্তাক দাড়িটা ভালোভাবে কামিয়ে টুপিটা ভেতরে ভরে নিল। আর জিনিসপত্র যতটা পারে পোঁটলাপুঁটলিতে বেঁধে ট্রাকে উঠে পড়ল। ট্রাক দীর্ঘযাত্রায় চলল। পথে হাড়পোড়া গরম, খাবার-জলেরও অমিল। অনেক কষ্টে তার মধ্যেই এগিয়ে চলেছে। তারা খাবার নিয়ে যাচ্ছে লোকের উপকারেরই জন্য। তবু পথেঘাটে যেখানে থামছে সবাই সন্দেহের চোখে তাদের দেখছে, যেন ওরা গেলেই বাঁচে। আবারও মুস্তাকের মনে হল যেখানে যত টাকাই থাকুক নিজের গাঁ, ঘরের মতো কিছু নেই। আর কিছু না থাক সেখানে নিশ্চিন্তি আছে।

শেষ অবধি দিন সাতেক পর ঝাড়খণ্ড বর্ডারে গিয়ে ট্রাকের যাত্রা শেষ হল। এখনও দুটো বর্ডার পেরিয়ে তবে মালদা। তার ট্রাক ড্রাইভার এবার তাকে আর একজন দেশওয়ালির হাতে তুলে দিল। তার ট্রাক বাংলা বর্ডার অবধি যাবে। তবে তাদের খালাসির দরকার নেই। সুতরাং ভাড়া বাবদ বেশ কিছু খসল। বাড়তি লোককে খালাসি হিসেবে দেখানো মুস্কিল, তাই মুস্তাকের ঠাঁই হল শাকসব্জি রাখার জায়গার মধ্যে। সেখানে দুদিন লুকিয়ে ঘাড় গুঁজে বসে থাকার পর সে অবশেষে বাংলা বর্ডারে পৌঁছল।

এক খানাখন্দে ভরা পায়ে চলা পথ দিয়ে সে রক্ষীদের অলক্ষ্যে বাংলায় ঢুকল। হিসেব করে দেখল, এবার দিন দুয়েক হাঁটলে বাকি পথটুকু পেরিয়ে নিজের গাঁয়ে পৌঁছতে পারবে। হাতে টাকাকড়ি বিশেষ নেই। একটা দোকান খোলা পেয়ে সে বাকি পয়সায় কিছু খাবার ও জলের বোতল কিনে নিল, তারপর আবার চলা শুরু করল। ট্যাঁক খালি করেই ঘরে ফিরছে। তবে প্রাণে বাঁচলে টাকা আবার হবে।

হাঁটছে আর চলছে। দিনে অসহ্য গরম, তাই চলাটা রাতেই বেশি। মুম্বইয়ে টাইম পাসের জন্য সে একটা ট্রানজিস্টার রেডিও কিনেছিল। সেটাতে শুনছে, গোটা দেশ কীভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে। একে অপরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার ডাক দিয়ে নানা গানও বাজছে। সেসব শুনতে শুনতে চলেছে মুস্তাক। চলতে চলতে দম ফুরিয়ে এলে একটু থেমে নিচ্ছে। কখনও দু’দণ্ড ঘুমিয়ে নিচ্ছে। মাঝে মাঝে পথচারীদের সাথে দেখা হচ্ছে। তারা কেউ কৌতুহলের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাচ্ছে, যেন সে একটা বিচিত্র জীব। কেউ আবার না তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। সে তো হবেই – এরা কেউ যে তার গাঁয়ের নয়, চেনা নয়।

তৃতীয় দিন সে গ্রামের সীমান্তে এল। আঃ, নিশ্চিন্তি! এতক্ষণে সে নিষ্ঠুর বাইরের পৃথিবীটা ছেড়ে নিজের গাঁয়ের সহানুভূতির ছায়ায় পা রাখতে চলেছে। বৌ, ছেলেমেয়ের মুখগুলো মনে ভাসছে। তবে সে তো এখনও বেশ ক’মাইল। তার মধ্যে পথে চেনাজানা কেউ অবশ্যই চোখে পড়বে, নিশ্চয়ই তাকে বাকি পথটা সাইকেলে পৌঁছে দেবে। পা তো আর চলে না!

কিন্তু রাস্তায় যে মানুষজন নেই! কিছু হয়েছে নাকি? ও হো, এখন তো লকডাউন। তাই সবাই ঘরে বন্দি। অগত্যা মুস্তাক পা চালাল। একটু পরেই দূরে চোখে পড়ল কয়েকজনের জটলা। মানুষ – তার দু চোখ জলে ভরে উঠল। আশ্রয়, মদত আর দূর নয়। সে দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেল।

মুখ খুলতে যাচ্ছে, তার আগেই এক গাট্টাগোট্টা জোয়ান তার সামনে এসে পথ আটকাল, “দাঁড়া!”      

“তুই ভিনদেশী?”

“না না – আমি তো এই গাঁয়ের লোক।”

“ধোকাবাজ! এই, তোরা এদিকে আয় – একটাকে পেয়েছি। মামাবাড়ি – বাইরে মাড়াতে যাবে, তারপর গাঁয়ে এসে করোনা ছড়িয়ে যাবে!”

“না-আ-আ –”

“কার চিৎকার?” বিছানায় শোয়া বালকটি ভয় পেয়ে তার ছোট্ট দিদিকে জড়িয়ে ধরল।

“ও কিছু না – দাদু ভয়ের স্বপ্ন দেখে চিৎকার করছে।”

“ভয়ের স্বপ্ন?”

“হ্যাঁ। দাদু বলে অনেক, অনেকদিন আগে যখন তার বয়স বাবার মতো ছিল তখন দেশে এক বি-রা-ট মহামারী এসেছিল, যার ধাক্কায় সমাজটা ভেঙে চুর চুর হয়ে গিয়েছিল। জীবাণু নয়, মানুষই হয়ে দাঁড়িয়েছিল মানুষের সবচেয়ে বড় দুশমন।”

“দিদি, বুড়োরা খুব বাড়িয়ে বলে, তাই না?” বালক বিজ্ঞের মতো ঘাড় নেড়ে বলল।

বালক-বালিকা এরপর হেসে লুটিয়ে পড়ল। জানালার ফাঁক দিয়ে নবোদিত সূর্যের রশ্মি তাদের উদ্ভাসিত মুখে এসে পড়ল।


……………………


অলঙ্করণঃ- সায়ন্ন্যা দাশদত্ত


1 comment:

  1. গল্পটা মোটামুটি খুব ভালো হয়েচছে।

    ReplyDelete