না পাঠানো চিঠিরা
অদিতি ঘোষ রায়
প্রিয় মেঘ,
প্রযত্নে-পাহাড়
ভেবেছিলাম একটা শেষ প্রতিবেদন তোর নামে লিখে যাবো। ইচ্ছে ছিলো তোর মুখে ছুঁড়ে মারবো হাজারো চিঠির প্রলাপ। সে চিঠিতে লেখা থাকবে হাজারো অভিমানের এক ইচ্ছাকৃত দায়ভার।তোর নামটা পাথরে খোদাই করে দিয়ে যাব সে লেখায়, যাতে চিঠি ছিঁড়ে যায় যাক নামটা না ছিঁড়ে যায়।দশ পাতা অভিমানের পর এক বাক্য মেঘমাখা তোর মত 'সে', খুঁজে পাবি তাকে। স্বীকার করে যাবো,তোর এই উদাসীনতার,শীতলতার মধ্যেই আমাদের মাঝে এসে নির্লজ্জের মত দাঁড়িয়েছিল একটা ধোঁয়াশা জড়ানো পাহাড়।আমাদের প্রতিটা মনোমালিন্যের সাক্ষী হয়েছে সে।সে আমায় মনে করিয়েছে আমরা কতটা হিংস্র আর এক একটা আস্ত মানুষ। তবুও আমায় আগলে রেখেছে প্রতি রাতে। কাঁদার বেলায় কাঁধ দিয়েছে যত্ন করে।আজকাল রোজ ঘুম ভাঙলে তোর ছবির আগে এসে তার মুখ দাঁড়িয়ে যায় আমার কিসব নেশা কাটাবে বলে। কিসের নেশা বল তো- ঘুমের নাকি তোর?
মজার কথা জানিস, আজ আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখি আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠায়, আমার চুল আঁচড়ে দিচ্ছে কেউ, পোশাক বদলে দিচ্ছে কেউ। তবু আমি নিস্তেজ ওই চিঠির শব্দের মত। এরা কেউ আমার সাথে গল্প করেনা। কত কত সন্ধ্যে পেরিয়েছে এরা চিঠির পাতায় নিস্তেজ রয়ে গেছে। রোজ রোজ দূরত্ব বেড়ে গেছে বিছানার পাশে থাকা তোর ফটোটার সাথে আমার চোখের। এখন আবছা লাগে ওটা। দেখতে গিয়ে দেখি ধুলো পড়ে গেছে। তবে এবার তো চিঠিগুলো উড়িয়ে দেওয়ার পালা। আমার অভিমান এখন এক আকাশপ্রমাণ। যে আকাশ রোজ রাতে পাহাড়ে এসে নত হয়। মেঘ, পাহাড়, আকাশ - চিঠির পাতাকে উড়িয়ে দিয়েছে।শুধু সারমর্মে লিখে যাই, আমাদের মাঝে এখন এক পাহাড় দূরত্ব। পাহাড় টপকানোর জেদে আমি তোকে কোনোদিন যদি ছুঁতে পারি চিঠিগুলো তোর আকাশে উড়িয়ে দিয়ে আসবো। লেখাগুলো না পেলেও অন্ততপক্ষে পাথর খোদাইটা রেখে দিস। ওটা বানাতে আমার এক জীবন ভালোবাসা গচ্ছা গেছে। ওই ভালোবাসাটুকুই আমি ফেরৎ চাই।
ইতি,
তোর হারিয়ে যাওয়া
সাঁঝবাতি
No comments:
Post a Comment