কোন পথে এগোচ্ছে আমাদের পৃথিবী?
তারেক অণু
গত কদিন ধরে মন বড্ড খারাপ হয়ে আছে, চোখ বুজলেই খবরের কাগজের একটি ছবি বার বার মনের পর্দায় ভেসে উঠছে, একটি লাশ, ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে দড়ি দিয়ে বাঁশের সঙ্গে, মুখ থেঁতলানো, আঘাতের পর আঘাতে দাঁত বিকৃত হয়ে বেরিয়ে পড়েছে, খুব খেয়াল করে দেখলে হয়ত সেখান থেকে টপ টপ ঝরে পড়া রক্তবিন্দুও দেখতে পেতাম।
নিচে উৎসুক জনতা, কৌতূহলী জনতা ভিড় করে লাশটা দেখছে, যেন কল্পলোকের ভয়াবহ দানবকে বধ করেছে বীর গ্রামবাসী, আজ এই আঁধারের জীবকে তাই এমন দিনের আলোতেই আশ মিটিয়ে অবলোকনের পালা। অথচ লাশটি এক দীপ্ত প্রাণীর, খানিকটা বড় আকারের এক বুনো বেড়ালের, এর নাম আমরা দিয়েছি মেছোবাঘ।
কী চমৎকার একটি প্রাণী, তার সাদা-ধূসর চামড়া যেন হিমালয়ের রাজা তুষার চিতার কথা মনে করিয়ে দেয়, কেন পিটিয়ে হত্যা করা হল প্রাণীটিকে? উত্তর- সে ক্ষমার অযোগ্য এক ভুল করেছিল, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামির অনেক সময় একটি ভুল ক্ষমা করা হয়, কিন্তু এই প্রাণীটির সেই একটি ভুল ছিল মৃত্যুর দরজায় কেবল কড়া নাড়া নয়, সেই দরজা দিয়ে অন্য ভুবনে পৌঁছে যাওয়া, সে ভুল করে ক্ষুধার জালায় লোকালয়ে মানে মানব বসতির আসে-পাশে চলে এসেছিল!
যে বীরপুরুষেরা মেছোবাঘটিকে নিজের রাজ্যে ফিরে যাবার বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিয়ে কোণঠাসা করে অন্য জগতে পাঠিয়ে দিল বাঁশের- বল্লমের ক্রমাগত আঘাতে, তারাই আবার ব্যাপক উৎসাহে বর্ণনা করছিল আরেকটি মেছোবাঘও দেখা গেছে, তারা সেটির প্রতীক্ষায় আছে, মানে সেটিরও পটল তুলতেই হবে, এদের সাথে দেখা হলে !
আরেকটি মেছোবাঘ, মানে তারা কি একটি দম্পতি ছিল? অজানা আশঙ্কায় ঘনীভূত হয়ে উঠে মনের গোপন কোণ, তার মানে কি তাদের বেশ কটি নাদুস-নুদুস বাচ্চা ছিল যারা কোন খোঁড়লের মাঝে মা-বাবার অপেক্ষায় সময় গুনছে, প্রতীক্ষায় রয়েছে পরিচিত উষ্ণ স্পর্শের, খাবারের। যদি তাই হয়, তাহলে কি বাচ্চাগুলো আর আগামী সূর্যের মুখ দেখবে? নাকি জগতের নিষ্ঠুরতম প্রাণীর মানুষের সাথে পরিচয় ঘটবার আগেই তাদের চিরবিদায় নিতে হবে এই পৃথিবী থেকে?
কেন এমনই হয় সবসময়? এই ঘটনাটি এই সপ্তাহেই ঘটল ভোলাতে, বছর দুই আগে ঘটেছিল মানিকগঞ্জে, এর মাঝে, আগে, পরে কত যে ঘটে কেউ কি তার সঠিক সংখ্যা, তথ্য দিতে পারবে? কেউ পারবে না । এই লক ডাউনের মাঝে বাংলাদেশে ১৯টি মেছোবাঘ বা মেছোবিড়াল খুনের ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি মিডিয়ার মাধ্যমে, এর বাহিরে যে কত ঘটনা আছে কে জানে!
এর আগে খবরের কাগজে দেখলাম বিরল প্রজাতির এক সারসকে সিলেটের সুনামগঞ্জে গুলি করে আহত করে পরে জবাই করা হয়েছে! বিরল প্রজাতি শুনেই বুক কেপে উঠল, দেশে ফোন করে জানতে পারলাম সারা বিশ্বে মহা বিপন্ন ডেমোজিল সারস ছিল সেটি, যা আজ পর্যন্ত মুক্ত পরিবেশে দেখা হয় নি আমার। সেই বিরল বিহঙ্গটিই উড়ে যাচ্ছিল বাংলার আকাশ দিয়ে, প্রভাবশালীর বন্দুকে টোটা ঠেসে তাকে ভুপাতিত করা হল, তারপর ধর্মমতে জবেহ পর্যন্ত!
অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে তার আগের দিনই একটি শম্বর হরিণ দলছুট হয়ে লোকালয়ে উঁকি দেবার শেষ দুঃসাহসটি করে, তার স্থান হয় রান্নাঘরের পাতিলে।
কেন বুনো প্রাণীদের প্রতি আমাদের এই আক্রোশ? যাকেই দেখ, তাকেই মেরে খেতেই হবে, খাওয়া যাবে না, তাহলে ও নিশ্চয় আমাদের জন্য ক্ষতিকর, মেরে ফেলো - সে সাপ, কুমির, শুশুক, বাঘডাস যাই হোক না কেন।
ছোটবেলায় জেনেছিলাম রক্তচোষা নামের সরীসৃপ অনেক দূর থেকেই মানুষের রক্ত চুষে নিতে পারে, রক্তচোষার সাথে সাথে তার শরীর হয়ে যায় টকটকে লাল! তাই, তাদের দেখা পেলেই মুখে আঙ্গুল পুরে চুষে ছিবড়ে বানিয়ে ফেলতাম সমানে, যাতে নিজের রক্ত শরীরের বাইরে যেতে না পারে! আর সেই সাথে হাতের কাছে ইট-পাটকেল, লাঠি যায় পাওয়া যায় তাই নিয়ে দলগত আক্রমণ চালানো হত সেই নিরীহ সরীসৃপদের উপরে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখাতেও দেখেছি এই কুসংস্কারের বর্ণনা, সেই সাথে অনেক বৃদ্ধের সাথে কথা বলে জেনেছি এমন ভ্রান্ত বিশ্বাস শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল নির্মল শৈশবেই।
যুগের পর যুগ চলে আসা এই ক্ষতিকর বিশ্বাসগুলোর রাজত্বের কারণে খুব কষ্ট পেলেও অবাক হব না যদি এখনকার স্কুলগামী শিশুরা বলে তারা কোন দিন রক্তচোষা নামের বহুবর্ণা গিরগিটিকে রঙ বদলে গাঢ় রক্তবর্ণ হতে দেখেনি, দেখেনি সোনালী গুইসাপ নামের অপূর্ব সুন্দর সরীসৃপকে, পানাপুকুরের পৃষ্ঠ ছুয়ে আলতো চলে যাওয়া জলসাপের কথা তাদের কাছে স্রেফ বইয়ের গল্পই হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্য আমাদের। ( উপরের দুই প্যারা কিউবার এক লেখায় লিখেছিলাম পরিবেশ রক্ষা নিয়ে)
স্পষ্ট মনে পড়ে আমাদের প্রাইমারী স্কুলের ড্রেনে একবার একটি সোনাগুই চলে এসেছিল, শুনেছি কিছু ডানপিটে ছাত্র ড্রেনের পাশেই তার বাসাতে পাওয়া ডিম ভেঙ্গে দিয়েছিল, সেই রাগে দেখলাম হুবহু ছোট ড্রাগনের মত দেখতে অপূর্ব রঙিন এই প্রাণীটি ক্রোধে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে লালা নিক্ষেপ করছিল অবিরাম, বড়রা বলল- সাবধান, গুইসাপের থু থু শরীরে লাগবে সে জায়গায় পচবেই পচবে, কোণ ডাক্তার ঠেকাতে পারবে না! কি বাজে কথা, এই কারণেই কি মানুষ গুইসাপ দেখলেই মারতে যেত! এখন জানি, গুইসাপের লালাতে কোন বিষাক্ত কিছু নেই, সরাসরি চোখে না লাগলে তা কোন ক্ষতিই করতে পারে না মানুষের। কিন্তু তাহলে কেন বছর কয়েক আগে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরে পথের ধারে পিটিয়ে মারা গুইসাপ পরিবারের লাশের সারি দেখতে হয়েছিল আমাকে!
আরেক দিন এক হলদে বর্ণের সাপ চলে এসেছিল দেয়ালের ফাটলে আশ্রয় নিতে, কার জানে চোখে পড়ল, ব্যাস গুজব রটে গেল সাপটির নাকি বিশাল এক ফণা আছে, গোখরা না হয়েই যায় না! পরপারে পাঠাতে দেরী হল না প্রবল প্রতাপশালী সর্পরাজকে।
এই জন্য দায়ী কে? শিক্ষা, ধর্ম, সরকার, জনগণ- কে? নাকি সবাই মিলেই তৈরি হয় এমন বিষাক্ত ভয়ংকর আবহাওয়া! যা বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা দেয় না কোন প্রাণীকেই?
এখন অনেকেই বলবেন, ধুর মিয়া, বাংলাদেশে আকছার লঞ্চডুবিতে একশ মানুষ মারা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ পৃথিবী মায়া ছেড়ে চলে যায়, আর আপনি এসেছেন বুনো জন্তু নিয়ে কথা বলতে!
হ্যাঁ, এসেছি, আমি তাদের নিয়ে কথা বলতে এসেছি, কারণ এই বিশ্বের তাদের অধিকার আমাদের চেয়ে বিন্দুমাত্র কম নয়! বলিভিয়াতে ইতিমধ্যেই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, প্রকৃতি এবং মানুষের সম অধিকারের ভিত্তিতে, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভুটানের সংবিধানে আছে দেশের বনভূমি মোট আয়তনের ৬০ ভাগ হতেই হবে, নামিবিয়া নামের দরিদ্র আফ্রিকান দেশটি নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করে সচেষ্ট প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষাতে!
সেই দেশগুলো অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এমন কোন সমৃদ্ধ দেশ নয়, কিন্তু তারা পরিবেশ রক্ষার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে পারলে আমরা নিতে পারছি না কেন! এককালে শুনে আসা দেশের শতকরা ১৬ ভাগ বন আজ হয়ে গেছে মনে হয় ৩ ভাগ, তার মধ্যে সুন্দরবনটা কেবল মাত্র বাঘমামাদের জন্য বেঁচে আছে, না হলে কবে চুলার লাকড়ি হয়ে যেত সব সুন্দরী, গরান, গেওয়া।
ধর্ম একটি প্রধান বাধা তাও মানি, বিশেষ করে আব্রহামিক ধর্মমতে যেখানে বারবার মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে বলা হয়েছে, জানানো হয়েছে মানুষের ভোগের জন্য সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে, কাজেই আমাদের ইচ্ছে উপরেই নির্ভর করতে হবে তাবৎ প্রাণীকুলকে! আবার প্রচলিত ধর্মমতই কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় অবদান রেখেছে পাশের ভারত, নেপাল ও ভুটানে। যেহেতু হিন্দু ধর্মমতে অধিকাংশ প্রাণীই দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত তাই তারা বেঁচে গেছে খুন হবার হাত থেকে, আর বৌদ্ধ ধর্মমতে তো বলাই হয়েছে- জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক! সেখানে প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ।
কিন্তু ধর্মীয় গোঁড়ামি মুক্ত গণচীনেও তো প্রকৃতির কল্যাণ সাধন হয় নি! ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পরেই চেয়ারম্যান মাও সে তুং বললেন- দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি মানুষের কাজে লাগাতে হবে! প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগাতে যেয়েই মারা পড়ল কোটি কোটি প্রাণী। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, এর পিছনে দরকার এই বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞান এবং তাকে কাজে লাগাবার প্রেরণা।
ধর্মের চেয়েও মূল বাধা জনগণের সচেতনতা, কিউবার একটা শিশুও জানে বাগানের গিরগিটি পোকামাকড় খেয়ে সাফসুতরো রাখে পরিবেশ, আর আমাদের শিশু গিরগিটি দেখলে ভয়ে চিৎকার করে বাবাকে ডাকে না হয় ঢিলের আঘাতে তেরটা বাজিয়ে দেয় সেই সরীসৃপের! আমরা কি করব? কোন পথে যাব? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি আদৌ কাক ছাড়া আর কোন বুনো পাখি দেখবে? চিড়িয়াখানার আর টেলিভিশনের সাপ ছাড়া কোন সরীসৃপ, ডলফিন ছাড়া কোন জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী! এখনো জেলেদের জালে শুশুক ধরা পড়লে পিটিয়ে মারা হয়, কুমির তো কবেই গেছে বিলুপ্ত হতে নদী-নালা থেকে, সেই সাথে একসময় বালু চরে আলসে রোদ পোয়ানো নিরীহ মেছো কুমির- ঘড়িয়াল। সেখানে কি আশা করব আমরা?
আমাদের বাড়ীর পেছনে এক মজা পুকুর ছিল, বিশাল এলাকা জুড়ে, সেখান থেকে কুব কুব আওয়াজ পেতাম, মা বলতেন ডাহুক পাখি। একদিন গ্রাম থেকে আসা অতি চাল্লু চাচাতো ভাই ফাঁদ পেতে সেই সাদা-কালো অসাধারণ পাখিটি চাক্ষুষ দেখালেন আমাদের,এই তো বছর কয়েক আগের ঘটনা । আমাদের খুব জানতে ইচ্ছে করে, এখনকার স্কুল পড়ুয়ারা শেষ কবে ডাহুকের ডাক শুনেছে? কিংবা ভোরের দোয়েলের সূর্য ওঠানো গান? নদীর বুকে শঙ্খচিলের উড়াল কি তাদের উতলা করে তোলে না? বর্ষার ব্যাঙের ডাক কি তাদের কাছে জগতের সবচেয়ে সমধুর সঙ্গীত বলে মনে হয় না? নাকি সেই সুযোগ তাদের আমরা পেতে দিই নি!
এক স্কুল বন্ধু খরগোশ পোষার জন্য পাগল ছিল, কিন্তু যেন তেন খরগোশ না, ছাগলের পা খরগোশ! সাধারণত দোকানে যে খরগোশ দেখা যায় সেগুলো কিন্তু বেড়ালের পা খরগোশ। তার আকাঙ্ক্ষিত প্রাণীটি নাকি বড়ই দুর্লভ, পরে আমরা জানতে পারি সেটি আদতে কোন খরগোশই নয়, এতই ছিল বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম হরিণ, যাকে অনেক অঞ্চলেই ফইট্টা বলে ডাকা হত, আজ আর ডাকা হয় না, কারণ এরা হারিয়ে গেছে চিরতরে।
খবরের কাগজে দেখেছিলাম বছর কয় আগে, সুন্দরবনের এক গ্রামে ঝড়ের সময় এক তরুণ দিকভ্রান্ত বাঘ চলে আসে, রান্না ঘরের উষ্ণতার সন্ধান পেয়ে সে চুলার পাশে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছিল! যখন ঘুম ভাঙল বড় বেড়ালটির সে ততক্ষণে হিংস্র মানুষের ভিড়ে বাঘবন্দী হয়ে গেছে! কোন ক্ষতি করার জন্য নয়, মানুষখেকো হবার অপরাধে নয়, কেবল মাত্র সরল বিশ্বাসে আশ্রয় নেবার কারণেই নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হল সেই তরুণের। অথচ ঘূর্ণিঝড় সিডরের তান্ডবে যে বাঘটি মারা গিয়েছিল, সেই ঝড়ের মাঝে চোরাশিকারিরা তার গলার ও স্থান বিশেষের চামড়া কেটে নিয়ে যায়!
বাংলাদেশে এককালে তিন প্রজাতির গণ্ডার পাওয়া যেত শুনে চোখ কপালে তুলে ছিলাম! থাকত কোথায় তারা, খেত কি সেই বিশাল প্রাণীগুলো? অবাক হয়ে শুনলাম মাত্র শখানেক বছর আগেও যমুনা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নদীর চরে দীঘল ঘাসের বনে মনের সুখে চরে বেড়াত গণ্ডারের পাল, জমিদারের বন্দুক আর আবাসন নষ্টের কারণে যাদের উপস্থিতি আর রূপকথা বলেই ভ্রম হয়।
পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিতে শিক্ষা বিস্তারের যেমন বিকল্প নেই, তেমন এটিও খেয়াল রাখতে হবে এটি কোন ধরনের শিক্ষা। সুন্দরবন যেয়ে হরিণের মাংস খাবার জন্য পাগল হয়ে যায় সে শিক্ষিত সম্প্রদায়, তারা আসলে কি শিক্ষায় শিক্ষিত! সুনামগঞ্জের হাওরে বিষ দিয়ে প্রায়ই হাজার হাজার হাঁস মারার খবর আসে, সেই মৃত হাঁসের মাংসের ভোক্তা নিশ্চয়ই খেটে খাওয়া দিন-মজুর নয়, পকেটে কাঁচা পয়সাওয়ালা যুব সম্প্রদায়। কোন প্রাণী রক্ষায় WWF, UNDP সহ নানা সংস্থা থেকে যখন মোটা টাকার প্রজেক্ট আসে তখন দেখেছি অনেক জ্ঞানীগুণীর, বিখ্যাত প্রাণীবিশেষজ্ঞের টাকার লোভের কামড়াকামড়ি, তারা কি আসলেই প্রাণীদের গুরুত্ব বোঝেন? তাদের ভালবাসেন?
দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সাবেক এক অর্থমন্ত্রী অত্যন্ত শ্রুতিকটু ভাবে বলেছিল, দাওয়াত দিয়ে না আনলে আবার অতিথি কিসের! এই পাখিগুলো শস্য খেয়ে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি করছে! মাননীয় মন্ত্রী ভুলে গেছিলেন, অন্য সব জলাভূমি বাদ দিলেও কেবলমাত্র রামসার সাইট ঘোষিত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষাতেই প্রতিদিন ২০০০ টন ইউরিয়া সার লাগে, এই পরিমাণ জৈব সার কিন্তু আসে সেই হাঁসগুলোর বিষ্ঠা থেকেই !!
তারা কি জানে, পৃথিবী থেকে একবার কোন প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেলে তাকে আর কোনদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব না? তারা কি এই এই শিক্ষাটুকু পেয়েছে যে প্রাণীজগতের সব প্রাণীই পরস্পরের উপর নির্ভরশীল! আজ কোন প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেলে তার ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া হয় সারা পরিবেশ জুড়েই, যেমন কয়েক শতাব্দী আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মরিশাস দ্বীপের ডোডো পাখির অভাব এখন অত্যন্ত বেশী অনুভূত হচ্ছে, যখন দেখা যাচ্ছে তাদের ছাড়া গাছের বংশ বিস্তার ঘটছে না !
কোন পথে এগোচ্ছি আমরা ? কেমন হবে আমাদের ভবিষ্যতের পৃথিবী ?
লেখক পরিচিতি
তারেক অণু মনে প্রাণে নিসর্গী ও ভ্রামণিক। বিশ্ব দেখার নেশায় এর মাঝে ৬ মহাদেশ, ৫ মহাসাগর দেখেছেন ছুঁয়ে ছেনে। নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাগুলো শব্দতুলিকে আঁকতে ও ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দী করতে পছন্দ করেন। আরও পছন্দ করতে পর্বতে উঠতে, সাগরে ডুবতে, পাখি ও নিসর্গ সংরক্ষণে কাজ করতে।
No comments:
Post a Comment